গাড়ির নিচে ফেলে হত্যা, উল্টো নিহতের নামে মামলা

‘আমার মা মরা ছেলেটাকে ওরা গাড়ির নিচে ফেলে হত্যা করেছে। ও ছিনতাইকারী না। আমি ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার চাই।’ ছেলে হত্যার ভিডিও দেখিয়ে এভাবেই কান্নায় জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পুরান ঢাকায় খুন হওয়া কিশোর জয়ের বাবা শামসুদ্দিন জুম্মন।

গত ৭ আগস্ট রাতে জয় নামের এক কিশোরকে মারধোর করে গাড়ির নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট চকবাজার থানায় একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহত কিশোর জয়কে। নিহত জয় একজন ছিনতাইকারী ছিলেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জয়কে যেভাবে মারধোর করে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।

শনিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত কিশোর জয়ের বাবা ও অন্য স্বজনরা এসব অভিযোগ করেছেন। সংবাদ সস্মেলনে নিহত জয়ের বাবা বলেন, ‘পুলিশ উল্টা আমাদের হেনস্তা করছে। আমার ছেলেক হত্যা করে আমাদের স্বজনদের আসামি দিয়ে ডাকাতি মামলা দিয়েছে। সন্তানকেও হারিয়েছে, আবার হয়রানিও হচ্ছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সত্য ঘটনার বিচার চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে জয়ের বাবা সামসুদ্দীন জুম্মন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি সামসুদ্দীন জুম্মন। ছেলে হারিয়ে আজ আপনাদের সামনে এসে ছেলে হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাইছি। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহা-পুলিশ পরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্টদের জরুরি হস্তক্ষেপের আকুল আবেদন করছি। স্থানীয় সন্ত্রাসী ও থানা পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন ও তার সহযোগী রাব্বি। দীর্ঘ দিনযাবত এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং মাদকব্যবসা করে আসছে। তাদের অপরাধমূলক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধা দিয়ে আসছিল আমার ছেলে জয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যার প্রেক্ষিতে রিয়াজের সাথে জয়ের সম্পর্ক খুবই খারাপ হয়েছিল। তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হওয়ায় জয়ের ক্ষতি করার জন্য তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত ওই দুই সন্ত্রাসী। যার ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চকবাজার থানা এলাকার উর্দু রোডের জনতা ব্যাংকের সামনের পথ দিয়ে জয় যাওয়ার সময় পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মো. রিয়াজ উদ্দিন ও রাব্বিসহ আরও ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী তার পথরোধ করে অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং সন্ত্রাসীরা জয়কে মারধর করে রক্তাক্ত করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা জয়ের গলা চেপে ধরে জোড়পূর্বক চলন্ত গাড়ির দিকে ধাক্কা মারে। এতে জয়ের দেহ গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায়। এ সময়ও সন্ত্রাসীরা তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালালে ঘটনাস্থলেই জয়ের মৃত্যু হয়। যার প্রমাণ সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জয়ের বাবা বলেন, ‘জয়ের ওপর এমন হামলা ও নির্যাতনের দৃশ্য দূর থেকে দেখে মো. হাসিব হোসেন ওরফে আকিব নামের এক যুবক সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জয়কে রক্ষা করতে দৌড়ে এসে নিচ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করলে তাকেও সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করে। ’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে রক্তাক্ত অবস্থায় জয়ের নিথর দেহ উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আড়াল করার অপচেষ্টা চালায় জড়িত সন্ত্রাসীরা। তারা চকবাজার থানার এক পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ একটি মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে নিহত জয় ও তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া মো. হাসিব হোসেন ওরফে আকিবসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় চকবাজার থানায় একটি মিথ্যা সাজানো ডাকাতি মামলা দায়ের করে।’

জয়ের বাবা বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হত্যাকারীদের প্ররোচনায় সাজানো ডাকাতি মামলা দিয়ে নিহতের পরিবারসহ কয়েকটি পরিবারকে হয়রানি করছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে ও মিথ্যা মামলাকারী জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপির জরুরি হস্তক্ষেপের সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে নিহত জয়ের বাবার এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, “এই বিষয়ে ওসি স্যারের সাথে কথা বলুন। তিনিই বিস্তারিত বলতে পারবেন।’

পরে এই বিষয়ে জানতে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুমের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি। -দৈনিক আমাদের সময়