গোপালগঞ্জে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক জয়নব খানম
গোপালগঞ্জ সদরে অবস্থিত ১০১নং উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নব খানম। স্কুল পরিচালনা থেকে শুরু কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবক সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও বিদ্যালয়ে আসতে উদ্বুদ্ধকরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এ শিক্ষক। বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে নিয়েছেন নানামুখী পদক্ষেপ।
ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সহকর্মী, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, সুশীল সমাজ সহ সকল ক্ষেত্রে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং ক্লিন ইমেজ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তার স্বামী জনাব হাফিজুর রহমান মোল্লা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তাদের রয়েছে এক পুত্র সন্তান- আসিফ রহমান। আসিফ ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া করছেন।
জয়নব খানম লেখাপড়া করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। ১৯৯৪ সালে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই ঢাবি থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর জয়নব খানম বেছে নেন শিক্ষকতা পেশাকে। তার বাবা প্রয়াত মুওয়ালী উদ্দীন মুন্সী পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে এস. এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শিক্ষক মুওয়ালী উদ্দীন মুন্সীর দ্বিতীয় সন্তান জয়নব খানম গোপালগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন ২ বার। চলতি ২০২৩ ও গত ২০২২ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাইমারি শিক্ষক নির্বাচিত হন তিনি। বাবার পেশাকে ভালোবেসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও শ্রম সবই উজাড় করে দিচ্ছেন তিনি।
তার বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ফাস্ট গার্ল তাসনোভা ইসলাম বলেন, “হেড ম্যাডাম আমাদের খুব আদর করে। ক্লাসে এসে কোনো বইয়ে কোথাও পড়া বুঝতে না পারলে, বুঝিয়ে দেন। ম্যাডাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। ম্যাডাম আমাদের ভালো রেজাল্ট করে অনেক বড় মানুষ বলেন।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সবিতা মল্লিক বলেন, “আমাদের প্রধান শিক্ষকের স্কুল পরিচালনায় অসাধারণ গুণাবলি রয়েছে। স্কুলের যাবতীয় রেকর্ড, রেজিস্টার ও ফাইল সংরক্ষণ করেন তিনি। স্কুল গমনোপযোগী শিশুদের বাৎসরিক জরিপ, অভিভাবকবৃন্দকে তাদের সন্তানদের স্কুলে প্রেরণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, শিক্ষকমণ্ডলী, ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে শিশুদের দৈনিক ও নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে সচেষ্ট ভূমিকা রাখেন। বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভা, বাৎসরিক ক্রীড়ানুষ্ঠান ও অভিভাবক দিবস উদ্যাপন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ও ভালো ফলাফল লাভে তিনি সর্বদা চেষ্টা করেন।”
বিদ্যালয়ের অভিভাবক আবু আমির জানান, “স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং আমরা অভিভাবক সকলের সাথে হেড ম্যাডাম মার্জিত আচরণ করেন। নিয়মিত অভিভাবক সভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানান। ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে উপস্থিতি, লেখাপড়ার মানোন্নয়ন, ভালো রেজাল্ট সবকিছু নিয়ে পর্যালোচনা করেন। আমাদেরকে ছেলেমেয়েদের মানসিক গঠন ও লেখাপড়ায় যত্নশীল হতে বলেন।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার সাহা বলেন, “বিদ্যালয়ের পাঠাগার ও আসবাবপত্র, শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সহ ক্যাশ বুক ও স্টক রেজিস্টার সংরক্ষণ করেন। শ্রেণিকক্ষ, বিদ্যালয়ের আঙিনা, উঠান এবং শৌচাগার অর্থাৎ বিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রেখে শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও জ্ঞান অর্জনে তিনি একনিষ্ঠ।”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন