চলনবিলের ধারে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শুটকির চাতাল, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

জলরাশির বিশালতা ও বর্ষাকালে অপার সৌন্দর্যের লীলাভুমি ঐতিহ্যবাহী চলনবিল। বর্ষা মৌসুমেসৌন্দর্যের পিপাসু যে কাউকেই হাতছানি দিয়ে ডাকবে তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। ভ্রমণ পিপাসুরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা নিয়ে এই চলনবিলে ভ্রমণও করে, তার প্রকৃতি সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে থাকে।

এই চলনবিলে রয়েছে মৎসের ভান্ডার। বর্ষা মৌসুমে চলনবিলকে ঘিরে শত শত পরিবার মাছ ধরে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বিশেষ করে কার্তিক মাসের দিকে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার সময় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। আর তখনই এই বিলের রাস্তার পাশে নদীর তীরে সুবিধা মতো স্থানে গড়ে ওঠে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের শুটকী মাছের চাতাল। চলে মাঘ মাসের কিছু অংশ পর্যন্ত। আর এই শুটকি মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাকযোগে সৈয়দপুর হয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। তবে চায়না জালের প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মাছের পরিমাণ কম বলে জানান শুটকি মাছ চাতালের একাধিক মালিক।

পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ষোলটি উপজেলার বুক জুড়ে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম চলনবিল। বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে নানান প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পুরো বর্ষা মৌসুমে এই চলনবিলে চলে মৎস্য শিকারীদের মাছ ধরা। মাছ ধরেই তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন শত শত পরিবার। বিশেষ করে কার্তিক মাসের শেষের দিকে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ে। সেগুলির মধ্যে পুটি, বোয়াল, শোল, টাকি, শিং, মাগুড়, কৈসহ নানান প্রজাতির দেশি মাছ রয়েছে। আর এই মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিল পাড়ের সুবিধামতো স্থানে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক শুটকির চাতাল। মৌসুমী এই শুটকির চাতাল গুলিতে শত শত শ্রমিক কাজ কারে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকরা চাতালের কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে ভাঙ্গুড়া উপজেলার কলকতি গুমানী নদীর তীরে চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারি খলিশাগাড়ি বিল ঘুরলে সেখানে শুটকি মাছের একাধিক চাতাল দেখা গেছে। সেখানে একাধিক চাতাল মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কার্তিক মাসে শেষ দিকে থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত এই সকল এলাকায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। সেই সুবাদে বিলপাড়ে গড়ে ওঠে একাধিক শুটকির চাতাল। তারা আরও জানান, প্রতিটি চাতালে পাঁচ থেকে সাতজন করে শ্রমিক থাকে তাদের মাসিক বেতন সাত থেকে পনের হাজার পর্যন্ত। পুঠি মাছ আকার ভেদে দুই হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় করেন তারা। প্রতিমণ মাছে তিন থেকে চার কেজি লবণ লাগে আর আবহাওয়া ভালো থাকলে শুকাতে প্রায় চার-পাঁচদিন সময় লেগে যায়। প্রায় তিনমণ মাছ শুকিয়ে একমণ হয়। শুকানো মাছ ট্রাকযোগে সৈয়দপুরে নিয়ে আকার ভেদে ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পযর্ন্ত প্রতিমণ বিক্রি করা যায়। সেখান থেকে রপ্তানী হয় বিদেশে।

ভাঙ্গুড়া এলাকার চাতাল শ্রমিক জমির উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এই শুটকি মাছ বিক্রয় হয় না। শুকিয়ে বস্তায় পুরে রেখে বেশি হলে ট্রাকযোগে সৈয়দপুরে নিয়ে বিক্রয় করতে হয়।’ চাটমোহর উপজেলার খলিশাগাড়ি বিল পাড়ের চাতাল মালিক আব্দুর রহমান বলেন, এই মৌসুমে তারা বিলপাড়ে চাতালের পাশেই অবস্থান করেন এবং মাছ ক্রয় করে শুটকির চাতাল করে মাছ শুকিয়ে থাকেন। এ কাজ প্রায় ২৫ বছর ধরে করছেন। তবে এবছর মাছের পরিমাণ অনেকটাই কম। বিশেষ করে চায়না নামক এক ধরনের নতুন জাল দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে মাছের পরিমাণ কম বলে তার ধারণা।