চিরচেনা রুপে রাজধানী, যানজটে নাকাল নগরবাসী

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ দুই সপ্তাহ পর শিথিল করা হয়েছে। সড়কে চলছে গণপরিবহন। খুলেছে দোকান-পাট, বিপণিকেন্দ্র। একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে রাজধানীর চিরচেনা সেই তীব্র যানজট।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলেজগেট, আসাদগেট, আড়ং, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ পর কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার প্রথম দিন সকাল থেকেই কর্মজীবী মানুষেরা কর্মস্থলে যোগ দিতে ছুটছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাট, শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলায় এসব পেশার মানুষেরা নিজ নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে ছুটছেন। ফলে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। অনেকে যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত ধরে হেটে চলেছেন গন্তব্যে।

রাজধানীর খামারবাড়ি সিগন্যালে দেখা গেছে শত শত গাড়ি। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে যানজটে। ফলে সুযোগ পেয়ে ঘুমিয়ে নিতেও দেখা গেছে গাড়ির চালককে। তীব্র গরম এবং যানজটে অতিষ্ট হয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে থাকছেন মনুষ।

ওয়েলকাম গাড়ির চালক নাসির বলেন, দীর্ঘদিন পর রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। এটাই আজ প্রথম টিপ। প্রথম টিপে এসেই দুই ঘণ্টা জ্যামে বসে আছি। কখন পৌঁছাবো আর কখন আরেকটা টিপ নিয়ে ফিরবো কে বলতে পারে। লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনেই যদি এমন হয় পরে কী হবে, প্রশ্ন নাসিরের।

বাসযাত্রী মাহবুব বলেন, আজ থেকে অফিস খুলেছে ভাই। অফিস মতিঝিলে। সকালে বের হয়েছি, এখন সাড়ে ১২ টা বাজে। এখনও ফার্মগেটে জ্যামে বসে আছি। কখন অফিসে পৌঁছাবো কী জানি। ভাবছি হেঁটে যাবো; কিন্তু অনেক রাস্তা। অবার প্রচুর গরমও। তাই হেটেঁ যাওয়ারও সাহস করছি না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সজল। হেঁটে চলেছেন ফুটপাত ধরে। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ঠিক সময়ে অফিসে না পৌঁছালে চাকরি চলে যাবে। আবার বসের কাছে কথা শুনতে হবে। তাই যানজটে না বসে থেকে হেটেঁ চলেছি। লকডাউনের মধ্যেও আমাদের অফিস চলেছে। তখন গাড়ি না চললেও একটু কষ্ট ও টাকা খরচ হয়েছে ঠিকই, তবে অনেক আরামে ছিলাম। কোনো যানজট ছিল না। এত মানুষ ছিল না। এখন যে অবস্থা, তাতে করোনায় দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে লকডাউন শিথিল থাকলে এবং মানুষ চলাফেরা করলে সরকার করোনায় মৃত্যু কমাতে পারবে না।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

পরামর্শক কমিটির সভাপতি ডা. সহিদুল্লা বলেন, বিধিনিষেধ শিথিলের এই সিদ্ধান্ত তাদের পরামর্শের উল্টো। তার আশঙ্কা এর ফলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে।

পরামর্শক কমিটির অন্য একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে আমরা অবস্থান করছি। তখন এটা কেমন সিদ্ধান্ত হলো বুঝি না।

এদিকে করোনা মহামারি রোধে গত ১ জুলাই থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই সময়ে গণপরিবহণ, অফিস, শপিংমল বন্ধ রাখা হয়।

ঈদের সপ্তাহে সারাদেশে কুরবানির পশুর হাট বসানোরও অনুমতি দিয়ে আজ থেকে ৮ দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করে দেয়া হয়। তবে ২১ জুলাই ঈদ শেষে আবার ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়ে চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহণ, অফিস, শপিংমল। এমনকি এবার গার্মেন্টসসহ শিল্প কলকারখানাও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।