চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ৬ রানে হারলো পাকিস্তান
ম্যাচের অনেকটা জুড়ে মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জিতে যাবে পাকিস্তান।
কিন্তু মাত্র ১১৯ রান হাতে নিয়ে এমন এক জয় তুলে নিলো ভারত। যা অনেকদিন মনে রাখবে ক্রিকেট সমর্থকরা।
ম্যাচ শেষে টেলিভিশন ধারাভষ্যকাররা বলছিলেন ব্যাটারদের কঠিন দিনে বোলাররা বাঁচিয়ে দিলেন তাদের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী দল আমেরিকার বিপক্ষে হারের পর ভারতের বিপক্ষে এই হারে টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের আশা প্রায় শেষ। এই গ্রুপে কানাডাও এক ম্যাচে জয় পেয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান ২ ম্যাচে ২ হার।
জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে ম্যাচের মাঝেই এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়েছেন, “এই একই দল ইউএসএর বিপক্ষে খেলেছে দেখে বিশ্বাস হয় না। পাকিস্তান যেন অননুমেয় ক্রিকেট খেলাটা শিল্পে পরিণত করে ফেলেছে”।
বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালের ধারাভাষ্যকার প্রকাশ ওয়াকাঙ্কার বলেন, “আরও একবার পাকিস্তান ম্যাচ হারার কায়দা খুঁজে বের করে ম্যাচ হারলো।”
নিউ ইয়র্কের নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ৩৪ হাজার ধারণক্ষমতার বেশিরভাগ জুড়েই ছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা।
গোটা গ্যালারি নীল রঙে ছেয়ে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল এটা নিউ ইয়র্ক না, হায়দ্রাবাদ বা আহমেদাবাদ।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচের স্মারক নেয়ার সময় ভারতের জয়ের নায়ক জসপ্রিত বুমরাহ বলছিলেন, “মনেই হয়নি আমরা ভারতের মাটিতে খেলছি না”।
ম্যাচের শুরু থেকে বৃষ্টি বারবার বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল, বিলম্বে অনুষ্টিত টসে জিতে বাবর আজম কোনও দ্বিতীয় ভাবনা ছাড়াই বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন।
শুরুতে ব্যাট করে ভারত তিন ওভারের মাথায় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার ভিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার উইকেট খোয়ায়।
এরপর পাকিস্তানের বোলাররা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে ভারতকে আর স্বস্তিতে রাখেনি।
ছয় বল আগেই ১১৯ রানে ১০ উইকেট হারায় ভারত।
জবাবে পাকিস্তান পুরো ২০ ওভার খেলে ১১৩ রান তোলে।
এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি দেখায় ভারতের ছিল ৬টি জয়, পাকিস্তানের ১ টি, এখন ভারত ৭, পাকিস্তান ১।
২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের জার্মানি বনাম ব্রাজিল ম্যাচের পর থেকেই এই ৭-১ স্কোরলাইন ক্রীড়াজগতের এক বিখ্যাত স্কোরলাইন।
যেভাবে জয় পেল ভারত
ভারতের করা ১১৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরু থেকে সাবধানী ব্যাট করেছে।
প্রথম দশ ওভারে ৫৭ রান তুলেছে পাকিস্তান। ক্রমশই ১১৯ রানের এই লক্ষ্য বড় হতে থাকে পাকিস্তানের জন্য।
বিশেষত মোহাম্মদ রিজয়ানের ৪৪ বলে ৩১ রানের ইনিংসটি পাকিস্তানের জন্য বেশ কঠিন করে তোলে পরিস্থিতি।
আর চার জন ফাস্ট বোলার নিয়ে একাদশ গড়া পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপও তেমন লম্বা নয়।
গোটা ইনিংসজুড়ে পাকিস্তানের ওভারপ্রতি প্রয়োজন ছিল ৬ রান করে, সেখানে শেষ পাঁচ ওভারে বাড়তে বাড়তে একদম অন্তিম ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান।
নাসিম শাহ দুটি চার মেরেও পাকিস্তানকে প্রয়োজনীয় রান এনে দিতে পারেননি।
গোটা গ্যালারি নীল রঙে ছেয়ে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল এটা নিউ ইয়র্ক না, হায়দ্রাবাদ বা আহমেদাবাদ।ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,গোটা গ্যালারি নীল রঙে ছেয়ে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল এটা নিউ ইয়র্ক না, হায়দ্রাবাদ বা আহমেদাবাদ।
ম্যাচের নায়ক জসপ্রিত বুমরাহ
মূলত বুমরাহ’র করা চারটি ওভার এই ম্যাচে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছে।
এই চার ওভারে দিয়েছেন ১৪ রান, ১৫টি ডট বল।
পাওয়ারপ্লেতে বুমরাহ পাকিস্তানের অধিনায়ক ও প্রধান ব্যাটার বাবর আজমের উইকেট নিয়ে নেন, এর আগে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাবরকে আউট করেছিলেন বুমরাহ।
১৪ ওভারে ৮০ রান করা পাকিস্তানকে যখন মোটামোটি স্থির মনে হচ্ছিল তখন বল হাতে নিয়ে ওভারের প্রথম বলেই সেট ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে পাঠান বুমরাহ।
শুধু উইকেট না, বুমরাহ যেন প্রতিপক্ষের মাথায় ঢুকে গিয়েছিলেন এই চার ওভারে।
যখনই বল হাতে নিচ্ছিলেন দৃশ্যত মনে হচ্ছিল পাকিস্তানি ব্যাটাররা যেন একটু বাড়তি সতর্ক এবং সন্ত্রস্ত।
হারশা ভোগলে লিখেছেন, “ভারত যে বোলিং করেছে এটা ওপর আর কিছু হয়না”।
মোহাম্মদ আমির যেন এখনও সেই তরুণছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,মোহাম্মদ আমির যেন এখনও সেই তরুণ
মোহাম্মদ আমির যেন এখনও সেই তরুণ
শেষ যেবার ভারত কোনও আইসিসির রঙ্গিন পোশাকের টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিল সেই ম্যাচের স্মৃতি ভারত-পাকিস্তান দুই দলের সমর্থকদের মনেই তরতাজা।
মোহাম্মদ আমির প্রায় এক স্পেলেই ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন।
প্রায় ৭ বছর পরে আমির সেই ভারতের বিপক্ষে একই রকম ক্ষুরধার।
প্রথম ওভারে দিয়েছেন মাত্র চার রান, তবে দ্বিতীয় ওভারটা ছিল স্পেশাল।
ছয় বলের ৩টিতে অন্তত উইকেট নেয়ার সুযোগ তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে দুটি বল ঋষভ প্যান্টের ব্যাটের কোণায় লেগে চার হয়ে গেছে।
এই ওভারে এসেছে ১২ রান, কিন্তু এই স্কোর আমিরের বোলিং এর ভয়ানক রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ।
এরপর আমির এলেন ১৫তম ওভারে এবং ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে সেট ব্যাটার পান্তকে আউট করলেন প্রথম বলে, তখন পান্ত কেবলই ভয়ানক হতে শুরু করছিলেন ৩১ বলে তার ব্যাটে এসেছে ৪২ রান।
ঠিক তার পরের বলেই রাভিন্দ্রা জাডেজা গোল্ডেন ডাক।
আমিরের এই ওভারে রান এসেছে মাত্র একটি, উইকেট গেল ভারতের দুটি।
এক ওভারে ১২ রান দেয়ার পরেও চার ওভার শেষে আমির রান দিয়েছেন ২৩, ডট বল দিয়েছেন ১৫টি।
এই সময়ের মাঝে ভারতের স্কোর ৮৯ রানে তিন উইকেট থেকে ৯৬ রানে ৭ উইকেটে চলে যায়।
পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে চারজন ফ্রন্টলাইন ফাস্ট বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছে।
চারজনই মনে রাখার মতো বল করেছেন।
নিউ ইয়র্কের উইকেট ছিল ফাস্ট বোলিং বান্ধব, এই উইকেট নিয়ে ম্যাচের আগে অনেক আলোচনা সমালোচনা ছিল। কিন্তু এই উইকেটে চাইলে ভালো ব্যাটিংও করা যায় সেটাই দেখিয়েছেন ঋষভ পান্ত। বাকিরা উইকেটের আচরণ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এই সুযোগটা পাকিস্তানি বোলাররা কাজে লাগিয়েছে সঠিক জায়গায় বল ফেলে।
চার পেসার মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট, ডট বল দিয়েছেন ৫৪টি, ৯৬ বলের মধ্যে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা যথেষ্ট হয়নি, টানা দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাবর আজমের দল।
হারের কারণ কী বলছেন বাবর আজম?
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, বোলাররা ভালো করেছে কিন্তু ব্যাটাররা প্রতিদান দিতে পারেননি।
“প্রথম ৬ ওভারে ভেবেছিলাম অন্তত ৪০-৪৫ রান করবো, সেটা হয়নি। আমরা আসলে শেষদিকের জন্য অতিরিক্ত কাজ ফেলে রেখেছিলাম এবং এটাই আমাদের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়ায়।”
বাবর আজমের মতে অনেক বেশি ডট বল খেলার কারণেই পাকিস্তান এই ম্যাচটা হেরেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন