চিরস্মরণীয় মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ মহররম
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2022/08/received_5153371621405016-900x450.webp)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
রাসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য চান্দ্রমাসের হিজরি সন সূচনা। আরবি বর্ষপঞ্জির সঙ্গে পৃথিবীর ১৬০ কোটি মুসলমানের আবেগ-অনুভূতি ও ইসলামি আচার-অনুষ্ঠান সর্বোপরি ইবাদত-বন্দেগির বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। হিজরি সন মুসলমানদের অশেষ ঐতিহ্যের অবদানে মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে সমাদৃত।
রাসুল (সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে মদিনায় হিজরত করেন, কিন্তু এর প্রস্তুতি ও আকাবার শেষ বায়আতের পরবর্তী সময়ে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রথম যে চাঁদটি উদিত হয়েছিল, তা ছিল সম্মানিত মহররম মাসের। অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামের হিজরত মহররম থেকে শুরু হয়েছিল, তাই হিজরি সনের প্রথম চান্দ্রমাস মহররম থেকে ধরা হয়।
মুহাররম মাস অত্যন্ত সম্মানিত, রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় বারোটি, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা: আয়াত-৩৬)। ১. মুহাররম, ২. রজব, ৩. যিলকদ, ৪. যিলহজ্ব। এ মাস গুলোতে আরব দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত বন্ধ থাকতো। এ চার মাস আরব দেশে শান্তি বিরাজ করতো বিধায়, এ সময়ে মানুষ হজ ও ওমরা পালন করতো। ভূম-ল ও নভোম-লের সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন-প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণসব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তি আশুরাতেই ঘটেছিল।
মুসা (আ.) সমুদ্রপথে রওনা হওয়ার দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় রাসুল (সা.) আশুরায় কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। আশুরা এলে তিনি বিনয়ে বিনম্র থাকতেন এবং রোজা পালন করতেন। (তাফসিরে তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির)।
আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে আজও রেখেছে। আশুরার রোজা রাসুল (সা.) আমলেই ছিল। রাসুল (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে। রাসুল (সা.) তাদের এই দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলেন। জানতে পারলেন এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের জেলখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে। রাসুল (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। এরপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম মিলিয়ে ২টি রোজা রাখতে বললেন। কারণ, ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যেন সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা সবার্ধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)।
১০ মহররম আশুরার রোজা রাখা সুন্নত। আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া। মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা; ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা। এ মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরিফ ও ৭০ বার ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফজিলতের উত্তম আমল। আশুরার রোজা রাখার চারটি নিয়ম রয়েছে: যথা প্রথম থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১০টি রোজা রাখা। তা সম্ভবপর না হলে ৯, ১০ ও ১১ তারিখ মোট ৩টি রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ মিলিয়ে ২টি রোজা রাখা। এটাও সম্ভব না হলে শুধু ১০ তারিখে ১টি রোজাও রাখা যাবে। যদি কেউ শুধু ১০ তারিখে রোজা রাখেন এবং ৯ বা ১১ তারিখ রাখতে না পারেন; তবে এই ১টি রোজার জোড়া মেলানোর জন্য অন্য দিন রোজা রাখার প্রয়োজন হবে না।
কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ; যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।’ আশুরার দিনে (আগে বা পরে এক দিনসহ) আমরা রোজা রেখে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করার সুযোগ গ্রহণ করি। মুহাররম মাসের গুরুত্ব অনুধাবন করে, দৃঢ়তার সাথে আমল করলে, রাব্বে কারিম অবশ্যই আমাদের পূর্বেকার গুণাসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি নফল রোজা, নফল নামাজ ও তাসবিহ তাহলিল পাঠ এবং বেশি বেশি করি দরুদ শরফি পাঠ করতে হবে। মুহাররম উপলক্ষে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, ব্লেড বা ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা, নিজের শরীর থেকে চাবুক মেরে রক্ত বাহির করা, খালি পায়ে হাটা ইত্যাদি মনগড়া কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাব্বে কারিম মুহাররমের বাস্তবিক শিক্ষা অর্জন করার সকলকে তৌফিক দান করুক। আমিন।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন