চীনে সন্তান জন্মদানে অনিচ্ছুক কর্মজীবী নারীরা

বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ চীন। পৃথিবীর প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ মানুষের বসবাস দেশটিতে। অার তাই জনসংখ্যার চাপ কমাতে বেশ কয়েক দশক কঠোরভাবে ‘এক সন্তান নীতি’ অনুসরণ করে দেশটি। কিন্তু সবশেষ ২০১৫ সালে এ নীতি থেকে সরে আসে চীন। এখন আর দেশটিতে দুই সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে চীনা দম্পতিদের কোনো বাধা নেই। তবু চীনের জনমিতিক হার আগের মতোই আছে। কারণ চীনা কর্মজীবী নারীরা তাদের পরিবার সম্প্রসারণ করতে অনিচ্ছুক। সম্প্রতি দেশটির বৃহত্তম একটি অনলাইন ওয়েবসাইট পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঝাওপিন ডটকম নামের ওই ওয়েবসাইটের জরিপে দেখা গেছে, কোনো সন্তান নেই এমন ৪০ শতাংশ কর্মজীবী নারী সন্তান নিতে আগ্রহী নয়। এছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ কর্মজীবী নারী যাদের একটি করে সন্তান রয়েছে, তারা আরেকটি সন্তান নিতে অনিচ্ছুক। বিশেষ করে বেইজিং, সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলোয় জীবনযাত্রার খরচ ব্যয়বহুল, দীর্ঘস্থায়ী কর্মঘণ্টা এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার খরচ বেশি হওয়ায় অধিকাংশ নারী সন্তান নেয়া থেকে বিরত থাকেন।

এছাড়া চীনে সন্তান জন্মদান এখনো আর্থিক ও কর্মজীবনে ক্ষতির কারণ। জরিপে দেখা গেছে, সন্তান জন্মদানের পর ৩৩ শতাংশ নারীর বেতন কাটা হয়েছে এবং ৩৬ শতাংশ নারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

অনলাইন ওয়েবসাইটটির ওই জরিপে নারীদের সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহার মূল কারণ হিসেবে যথেষ্ট সময় ও সামর্থ্যের অভাব এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার ব্যয়বহুল খরচের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনের এ সমস্যাটি নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বে কর্মজীবী নারীরা চাপের মুখে সন্তান জন্মদানে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। কিন্তু সমস্যাটি চীনের জন্য বিশেষভাবে তীব্র, কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে এক সন্তান নীতি অনুসরণ করায় দেশটিতে অল্প বয়সী মানুষের সংখ্যা কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়েছে বয়স্কদের হার, যা প্রতিযোগিতায় দেশটিতে পিছিয়ে দিচ্ছে এবং সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থায় বোঝা বৃদ্ধি করছে।

২০১৫ সালের অক্টোবরে দুই সন্তান নীতি ঘোষণার পর সরকারি কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর দেশটিতে অতিরিক্ত ৪০ লাখের বেশি শিশু জন্ম নেবে। কিন্তু গত বছর দেশটিতে ১৩ লাখ ১০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। সে কারণে এ সমস্যা সমাধানে যাদের এক সন্তান রয়েছে, তাদের আরো একটি সন্তান নিতে উত্সাহিত করতে সরকারকে ‘পুরস্কার ও ভর্তুকি’ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, জন্মহার বৃদ্ধির জন্য সিঙ্গাপুর ও জার্মানির মতো এখনো কোনো উদ্দীপক প্যাকেজ প্রদান করেনি চীন। এছাড়া যেসব পরিবার সন্তানের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের যত্নের ব্যবস্থা করতে পারে না, তাদের সহায়তার জন্য একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক গঠন করেনি দেশটি।

সূত্র: ব্লুমবার্গ