চুয়াডাঙ্গায় পরপর তিনবার ডাকাতি; পুলিশের দায়িত্ববোধ নিয়ে সমালোচনা

চুয়াডাঙ্গায় মহোৎসবে মেতে উঠেছে ডাকাতদলের সদস্যরা। জনগণের রক্ষাকবজ পুলিশের তৎপরতা না থাকায় পরপর তিনতিনবার একই উপজেলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটলো।

সর্বশেষ গতকাল (০৮ জুন) বৃহস্পতিবার ভোরে আলমডাঙ্গার বন্ডবিল গেট সংলগ্ন পৌর সীমানার সন্নিকটে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয় ডাকাতদলের সদস্যরা। পরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্সের যাত্রীবাহী বাস ডাকাতের কবরে পড়ে। পর্যায়ত্রুমে একটি ট্রাক ও দুটি আলমসাধুও তাদের জালে ধরা পড়ে। সেসময় রাত ৯টার দিকে ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদেরকে জিম্মি করে প্রায় ১০/১২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্স ভোর পেঁৗনে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছায়। এখানে কিছু যাত্রী নামিয়ে পরিবহনটি আলমডাঙ্গা বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিল। আগেই প্রস্তুতি নেয়া ডাকাতদল সড়কে আলমসাধু ও গাছ ফেলে প্রথমে নদীয়া ডিলাক্সের গতিরোধ করে। বাসে থাকা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪০ হাজার টাকা লুট করে নেয় বলে জানান নদীয়া ডিলাক্সের সুপারভাইজার সৈয়দ আলী।

ঠিক একইসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পূর্বাশা পরিবহনও ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতদের ভয়ে পুর্বাশার গাড়ীচালক বাসের দরজা খুলে দিলে ডাকাতদল অস্ত্র হাতে বাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে ঢাকার মিরপুর থেকে আসা চার গরু ব্যবসায়ীর একজনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকার একটি ব্যাগ লুট করে হাফপ্যান্ট পরিহিত ডাকাতদল বাহিনী। অন্য যাত্রীসহ কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লুট করে নেয়।

নদীয়া ডিলাক্সের সুপারভাইজার সৈয়দ আলী বলেন, বাসে বেশী যাত্রী ছিল না। বাস থেকে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।

পূর্বাশা পরিবহনের সুপারভাইজার মিরাজ বলেন, গাড়ি চালক এর আগেও একবার ডাকাতির কবলে পড়েছিলেন। ডাকাতরা তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছিল। এজন্য ভয়ে চালক বাসের দরজা খুলে দিয়েছেন। মিরাজও ১০/১২ লক্ষ টাকা লুট হওয়ার কথা স্বীকার করেন।

ঘটনার পরপরই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ নিয়ে এএসআই জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে ফোর্স নিয়ে পেঁৗছালে ডাকাতরা সড়কের পাশে থাকা মাঠের দিকে পালিয়ে যায়।

এদিকে, একই রাতে (০৭ জুন) বুধবার দিনগত রাতে ছোট পুটিমারী সড়কের জাকের মন্ডলের পরিত্যাক্ত বাড়ির কাছের সড়কে গাছ ফেলে বেরিকেড দেয় হাফপ্যান্ট বাহিনীর ৭/৮ জন ডাকাত সদস্য। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি গরুবাহী লাটাহাম্বারের গতিরোধ করে তারা। পরে লাটাহাম্বার রাস্তার ওপর রেখে পথ আটকে দেয় ডাকাতদল। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ইজিবাইক, পাখিভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ২০—২৫ জন যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, সোনার গয়না ও মূল্যবান মালামাল লুট করে পালিয়ে যায় তারা। সেসময় জেহালা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাসেম মাহমুদও ওই ডাকাতির কবলে পড়েন। তার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেসময় ভুক্তভোগীরা চিৎকার করলে এলাকাবাসী ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গার থানা পুলিশ, মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

এর আগে গত ৩১ মে রাতে বন্ডবিলে ভয়াবহ ডাকাতির ৮দিন পার হলেও আজও কাউকে চিহ্নিত কিংবা আটক করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। তবে ডাকাতির রেশ কাটতে না কাটতেই একই রাতে দু’টি জায়গায় ডাকাতির ঘটনায় জনমনে যেমন চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তেমনী পুলিশের প্রতি আস্থাটাও হালকাভাবে দেখছে সচেতন জনগণ।

স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, আমরা কার ওপর আস্থা রাখবো। শহরেই যদি ডাকাতি হয় তাহলে পুলিশের দরকার কী? মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন তিনবার ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে না পারায় পুলিশের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা ফুটে উঠছে চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে। তাদের দাবি, আলমডাঙ্গার যেসব এলাকায় ডাকাতি হয় সেসব এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের টহল বাড়ানো।