চুয়াডাঙ্গায় ভেজালমুক্ত গুড়ের সন্ধান পেয়েছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা

দেশের সর্ববৃহৎ চুয়াডাঙ্গা জেলার সরোজগঞ্জে গুড়ের হাট দুয়েক সপ্তাহ ধরে চালু হলেও এ সপ্তাহে উপচেপড়া ভিড় জমতে শুরু করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ গুড়ের হাটকে কেন্দ্র করে অত্র অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠেছে মানুষের সমাগমে।

হাটটিতে গুড়ের ভাঁড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে এ অঞ্চলের বিক্রেতারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাট থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ফরিদপুর, টেকের হাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা ভেজালমুক্ত গুড় কিনতে আসছে এ হাটে। এসব ভেজালমুক্ত গুড় রপ্তানিও হচ্ছে বিদেশে। গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো হাটজুড়ে। এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কর্মযজ্ঞের সুযোগ তৈরী হয়েছে শত শত শ্রমিকদের। ফলে এ সময়কে ঘিরে শ্রমিকদের জীবনযাত্রায়ও আগের তুলনায় সংসারে উন্নতি ঘটছে। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা হাজিরা করে থাকে তারা।

চুয়াডাঙ্গা তিতুদহ ইউনিয়নের সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বসে এ হাট। ঐতিহ্যবাহী এ হাটে কয়েকশ’ বছর ধরে এ জেলার মানুষ খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তৈরি করা ঝোলাগুড় ও নলেন পাটালি বেচাকেনা করা হয়। প্রতি সপ্তায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এ হাটে।

লম্বা লম্বা বিভিন্ন সাইজের গুড়ের মাটির হাড়ি বা ভাঁড়ে ১২ থেকে ১৪ কেজি গুড় ধরে থাকে। প্রতি গুড়ের ভাঁড়ের মূল্য ১৭শ’ থেকে ২২শ’ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। যার প্রতি কেজি মূল্য দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ছোট ছোট ধামায়-কাঠায় খেজুরের পাটালিসহ গুড় প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫টি ট্রাকে লোড করে পাইকারীরা নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এখানকার সুগন্ধযুক্ত ভেজালমুক্ত খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি হলেও কিনে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড়ের বেচাকেনা হয় এ হাটে। স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয় হওয়ায়। মৌসুমজুড়েই হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এই হাট। স্থানীয়সহ বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা পাইকারী ব্যাপারীরা এখান থেকে গুড়ে কিনে নিয়ে যায় বলেও এমনটাই দাবি বিক্রেতাদের।
ঢাকা থেকে গুড় কিনতে আসা কল্লোল উদ্দীন জানান, দেশের অন্যান্য হাটে এখানকার চেয়ে কম দামে গুড় পাওয়া যায়। তবে, সেসব গুড়ে চিনি মেশানো থাকে বলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ তা কেনেন না। বেশি দাম জেনেও ব্যাপারীরা ভালো গুড় কিনতে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জেই ছুটে আসেন। এ হাটে নিরাপত্তা সহকারে আমরা গুড় কিনতে পারি।

কুতুবপুর ইউনিয়নের সাহেব নগর গ্রামের গুড়ের ক্রেতা বদরুদ্দিন জানান, আমরা এই সরোজগঞ্জ বাজারে বহুদিন ধরে গুড় কিনে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে থাকি। তবে এবার গুড়ের বাজার ভাল। তবে দিন দিন গাছি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। কেননা পুরাতন গাছি যারা তারা অনেকেই মারা গেছে। যুবক ছেলেরা কেউ নতুন গাছি হচ্ছে না তাই গাছি কমে গেছে। সেক্ষেত্রে বাজারে গুড় কম আসতে শুরু করেছে।

সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবীননগর গ্রামের গাছি জমির হোসেন, জানান, আমি প্রায় ৪০টি গাছের রস সংগ্রহ করি। আমি ২০ বছর ধরে এই হাটে গুড় নিয়ে আসছি। আমাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা গুড় কিনে নিয়ে যায়।