চুয়াডাঙ্গায় শিশুর মৃত্যু; দোষী টিকা না নাপা-সিরাপ

চুয়াডাঙ্গায় ২ মাসের শিশুকে ইপিআই টিকা দেয়ার ১০ ঘণ্টা পর তাহিয়ান তৌফিক নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে শিশুটি।
মৃত শিশু তাহিয়ান চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটা গ্রামের তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে।

এদিন, সকালে সদর হাসপাতাল থেকে টিকা দেয়ার পর বাড়িতে গেলে দুপুর থেকে জ্বর বেড়ে ভুগতে থাকে শিশু তাহিয়ান। রাতে নাপা সিরাপ খাওয়ানোর আধা ঘণ্টাপর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানান তাহিয়ানের পরিবার। সেসময় দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে টিকা দেয়ার কারণে ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে পরিবারটি।

এদিকে, এ ঘটনায় বুধবার (১ মার্চ) মৃত শিশুর বাড়ি পরিদর্শন করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জনকে প্রধান করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান। সেসময় পরিদর্শনের পর নাপা সিরাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ পরিদর্শনকারীরা।

এবিষয়ে মৃত শিশু তাহিয়ানের পিতা তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে দুই পায়ে তিনটা টিকা এবং একটি টিকা ক্যাপ্সুল খাওয়ানো হয়। বাড়িতে আসার পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় ছেলে। পরে বাইরে থেকে কেনা দুধ ছেলেকে খাওয়ানোর পর দুপুর থেকে হালকা জ্বর আসে। রাতে নাপা সিরাপ খাওয়ানোর আধা ঘণ্টা পরই ছেলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। পরে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। এদিন রাত ১টার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, এর আগেও ছেলেকে টিকা দেয়া হয়েছে। সেবার কিছুই হয়নি। এবার টিকা দেয়ার পর খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ধারণা করছি টিকা দেয়ার কারণেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নাপা সিরাপ খাওয়ানোর জন্য এমন সমস্যা হয়েছে কিনা জানি না। স্বাস্থ্য বিভাগের টিম নাপা সিরাপটি নিয়ে গেছে। তারাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলতে পারবেন কোনো সমস্যা আছে কি-না।

এছাড়াও যে দোকান থেকে নাপা সিরাপ কিনেছি ব্যক্তিগতভাবে সেখানে আপাতত নাপা সিরাপ বিক্রি না করতে অনুরোধ করেছি। যেন কোনো শিশুর ক্ষতি না হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ঘটনা শোনার পর আমিসহ স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম শিশুটির বাড়িতে গিয়ে বিস্তারিত শুনেছি। টিকা দেয়ার কারণে মৃত্যু হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। টিকার কারণে মৃত্যু হলে প্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হতো। এমন মৃত্যু ১০ লাখে একজনের ঘটতে পারে। আমরা ওই নাপা সিরাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। টিকাগুলোর মেয়াদ যাচাই করেছি, কোনো সমস্যা নেই।

তিনি আরোও বলেন, শিশুকে গুড়া (বাজারজাত) দুধ খাওয়ানোর জন্য শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে প্রধান করে আনুমানিক ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একমধ্যে কিছু কম বেশি থাকতে পারে। ঘটনার তদন্ত প্রকৃত ঘটনা শেষ করতে এক সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি বা কম লাগতে। আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, যেহেতু টিকা কার্যক্রম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আওতাধীন। বিষয়টি শোনার পর সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।