চুয়াডাঙ্গায় সূর্যকেও তোয়াক্কা করছে না শীত! সকালেও জ্ব লছে হেডলাইট

সর্বোচ্চ গরম পড়ার যেমন নামডাক রয়েছে তেমনী দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা হিসেবে তাপমাত্রার রেকর্ডও থাকে চুয়াডাঙ্গায়। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ তীব্র শৈত্য প্রবাহসহ মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ পড়ে প্রতিবছরই। ফলে শীতে শুধু কাঁপুনীই নয় চুয়াডাঙ্গায় বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষদের কর্মক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে দারুণভাবে। এতে করে সংসার পরিচালনায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ওই শ্রেণীর মানুষগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বছরের দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

আজ (২৯ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে তাপমাত্রা ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শীতের সঙ্গে সঙ্গে ভোর সকালে কোয়াশার আভায় ২০ হাত দূরের মানুষকেও খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের দেখা মিললেও সূর্যকে তোয়াক্কা করছে না শীত। আর এ কারণেই শুধুমাত্র খেটে খাওয়া শ্রমিক ছাড়া সকাল গড়ালেও দেখা মিলছেনা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। শীত আর কোয়াশার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে আগের চেয়ে দেরি করে। তবে সড়কে বাস চলাচলে সাত সকালেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালাতে দেখা যাচ্ছে ড্রাইভারদের। কোয়াশা আর শৈত্য প্রবাহের কারণে বিভিন্ন শ্রেণীর চাকরীজীবি মানুষ অফিস আদালতে যেতেও দেরি করতে একপ্রকার বাধ্য হয়ে পড়ছে বলেও জানিয়েছে অনেকে।

এবারও তার কোন ব্যতিক্রম নয়। উপরোক্ত প্রতিবেদনের আলোকেই চলছে হু হু করা শীত শিউরে উঠছে শরীর। বেলা বাড়ার পর গতানুগতিক শীত কিছুটা কম থাকার আশঙ্কা থাকলেও তার উল্টোটা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সকাল ৬টায় ৮.৭ থাকলেও ৯টার দিকে তাপমাত্রা আরও কমে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকে। ফলে শৈত্যপ্রবাহ চলছে চুয়াডাঙ্গায়। শীতের তীব্রতা বাড়ায় খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেনা কেউই।

বেলা বাড়ার পর থেকে বিকেল নাগাদ বাজারঘাটে আগের মত মানুষের দেখা মিললেও সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই লোকশূন্য হয়ে পড়ছে চুয়াডাঙ্গার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। রাত যতই গড়াচ্ছে শীতও বাড়ছে ততই। শীতের কাঁপুনি থেকে রেহাই পেতে জায়গায় জায়গায় খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে অনেকেই।

এদিকে, শীতের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগে ঘরে ঘরে ছোট বড়সহ বৃদ্ধ বয়সীরা জ্বর ঠাণ্ডায় কাশি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। তবে ওভারলোড রোগী ভর্তি হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডসহ মেডিসিন বিভাগ প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা যেমন অপ্রতুল তেমনী বেডও কম। ফলে বাধ্য হয়ে আতঙ্কিত এ ঠাণ্ডার মধ্যেও হাসপাতালের ফ্লোরেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের রোগীদের। এতে করে চিকিৎসা চললেও যে সময়ের মধ্যে রোগী ভালো হওয়ার কথা সেসময়ের মধ্যে ভালো হচ্ছেনা রোগী।

আবার ভালো হয়ে বাড়ি ফিরলেও সেইসব রোগীদের মধ্যে অনেকেই ফিরে আবারও ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ২৯০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

হাসপাতাল ঘুরে রোগী স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই ঠাণ্ডায় ডায়রিয়া নিউমোনিয়া রোগে ভর্তি হচ্ছে। তবে হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা এবং বেড না থাকায় নিচে অবস্থান করেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ঠাণ্ডায় শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে মারাও গেছে এক শিশু। তাঁর বাড়ী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহের হানুরবাড়াদী গ্রামের আলমগীরের মেয়ে।

এছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। কিন্তু হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেবিকাদের। তবুও বাড়েনা সেবিকা বাড়েনা জায়গা বাড়েনা বেড। প্রতি বছর একই রকম সমস্যা দেখা দিলেও এর প্রতিকার নিয়ে ভাবেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, সদর হাসপাতালের শিশু বিষয়ক চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন ও আসাদুর রহমান মালিক খোকনের তথ্য মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিরাপদ পানি পান করার কারণে শিশুরা ডায়রিয়া রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা আরও বলছেন এ রোগ থেকে বাঁচতে সবসময় নিরাপদ পানি পান করতে হবে এবং প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায় আতাউর রহমান বলেন, এ সময় শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে বাইরের খাবার বাদ দিয়ে বাড়ীতে খাবার খাওয়ার আগে সবসময় হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তাহলে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া অনেকটাই সম্ভব।