ছয় দফা দিবস আজ

১৯৬৬ সালের ছয় দফা বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা চেতনার যাত্রাবিন্দু। ছয় দফার পটপরিক্রমায় বাঙালি পায় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন নেতৃত্বের কারণেই ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়।

শোষণ ছিল বহুমাত্রিক। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক। তবে পাকিস্তানীদের চব্বিশ বছরের এই শাসন ও শোষণ মেনে নেয়নি বাঙালি। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন ও চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে। এরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৬৬। ততদিনে গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। ৬৬’র ফেব্রুয়ারিতে তিনিই ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা।

এতে বলা হয়, পাকিস্তানকে ফেডারেশন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে হবে, প্রদেশ ভিত্তিক পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, প্রদেশগুলোর আধাসামরিক বাহিনী গঠন করার বৈধতা দিতে হবে এছাড়াও বলা হয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে মুদ্রা ব্যবস্থা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ।

ছয় দফা ঘোষিত হবার সাথে সাথে আইয়ুব সরকারের খড়গ নেমে আসে বঙ্গবন্ধুর ওপর। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ মানুষও বসে থাকেনি। ৭ জুন বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে হরতাল পালন করেন। গুলি চলে পাকিস্তানি জান্তার নির্দেশে। নিহত হয় ১১জন। আটক হয় প্রায় ৮০০ আন্দোলনকারী।

এরপরই পাল্টে যায় রাজনৈতিক হিসাব। পাকিস্তানীদের ২৪ বছরে শোষণ আরও স্পষ্ট হয় সাধারণ মানুষের কাছে। আর তখনই এটি হয়ে ওঠে বাঙালির অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার সুচিন্তিত দলিল।

রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ছয় দফা অস্ত্র দিয়ে হলেও দমন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আইয়ুব খান।

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার তাৎপর্য ছিল রাজনৈতিক বিবেচনা প্রসূত। কৌশলী আবার সাহসীও বটে।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দেয়ার পর তার বন্ধুদের বলেছিলেন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য সাঁকো দিলাম। এই ছয় দফা ছিল একটা সাঁকো যা দিয়ে আমরা স্বাধীনতার দোর-গোরায় পৌঁছেছি।

অভূতপূর্ব এই ছয়টি দফা উঠে এসেছিল বাঙালির ঘোষণের মুক্তির দর্শন হিসাবে। আর এই ছয়টি দফা এক মুক্তির দফায় জন্ম দিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।