কৃষি বিভাগের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন
জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে যশোরের রাজগঞ্জে কমেছে নারকেলের ফলন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে নারকেলের ফলন। নারকেল গাছের নানা রোগ ব্যাধির কারণে নারকেলের ফলন কমে গেছে বলে জানাগেছে। মূলত হোয়াইট ফ্লাইয়ের আক্রমণ, স্যুটি মোল্ড ছত্রাক, শূতিমূল এসব নানা রোগে নারকেলের ফলন কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে এর প্রতিকার সম্পর্কে কোনো পরামর্শ আজ পর্যন্ত দেয়া হয়নি বলে জানান রাজগঞ্জ এলাকার নারকেল চাষিরা। তথ্য মতে, রাজগঞ্জ এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে কোনো নারকেল বাগান নেই। তবে, এলাকার প্রায় বাড়ির সীমানায় ২-৪টা করে নারকেল গাছ রয়েছে।
নারকেল একটি অর্থকরী ফল। হানুয়ার গ্রামের হায়দার আলী বলেন, নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি দেখা দিয়েছে। এ রোগের কারনে রাজগঞ্জ এলাকায় বর্তমানে নারকেল গাছে ফলন নেই বললেই চলে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রুগোস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নামের একটি বিদেশী পোকা উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নারকেল গাছে ব্যাপকভাবে আক্রমণ শুরু করে।
ক্যারবীয় দ্বীপের এ পোকার ২০১৬ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আক্রমণের পর বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে এ পোকা অভিযোজন করে দ্রæত আক্রমণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষোভাবে দেশের নারকেল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নারকেল গাছে পরোক্ষভাবে স্যুটি মোল্ড নামের ছত্রাককে আক্রমনে সহযোগীতা করায় নারকেল গাছ দ্রুত সজিবতা হারিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে। জানা যায়, রাজগঞ্জ অ লে আজ থেকে ১০ বছর আগে নারকেলের বড় বড় আড়ত ছিলো।
সেই আড়ত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারকেল রপ্তানি হতো। নারকেল ছোবড়া বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করতো ব্যবসায়ীরা। বানিজ্যিক ভাবে রাজগঞ্জে গড়ে উঠে ছিলো নারকেল তেল তৈরির মিল। এই তেল রাজগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য রপ্তানি হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে নারকেলেন ফলন কমে যাওয়ার কারনে নারকেলের ব্যবসায়া আর কেউ করে না।
রাজগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ভিতর শতশত নারকেল গাছ, প্রায় নারকেল শূণ্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। জাহিদুল ইসলাম নামের একজন কৃষক বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। যেমন- নারিকেলের কুঁড়ি পচা, ফল পচা, ফল ঝড়া, পাতায় দাগ পড়া, ছোট পাতা, কান্ডের রস ঝড়া ও শিকড় পচা রোগ। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে হোয়াইট ফ্লাইং পোকার তীব্র আক্রমনে নারকেলের ফলন একেবারে কমে গেছে।
ফলে ডাব ও ঝুনা নারকেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। কৃষ্ণ রায় নামের এক চাষি জানান, তার বাড়িতে ও মাছের ঘেরের পাড়ে ৪০-৫০ টি মতো নারকেল গাছ রয়েছে। কিন্তু ফলন অত্যন্ত কম। তিনি বলেন, নারকেল গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকায় ভরে গেছে। আবার গোড়ায় সাদা রোগে (শূতিমূল ছত্রাক) পচে যাচ্ছে। এএলাকার অনেকেই এসব সমস্যার কথা বলেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো খোঁজখবর নেন না বলে জানান নারকেল চাষিরা। হানুয়ার গ্রামের আশিষ কুমার সরকার বলেন, রাজগঞ্জ এলাকায় অর্থকারী ফসল নারকেলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা ও প্রতিকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
নারকেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কৃষি বিভাগ কোন কাজে লাগে তা আমরা জানি না। কৃষকদের সমস্যা সমাধানে কৃষি বিভাগের কোনো উদ্যোগ নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন