জাতিসংঘের সাথে গণধর্ষণের আলোচনা এড়িয়ে গেলেন সু চি

মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম নারীদের ওপর যে যৌন সহিংসতা চালিয়েছে তা নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাননি দেশটির স্টেট কাউন্সিলর (কার্যত সরকার প্রধান) অং সান সু চি। বরং সু চি এ ধরনের আলোচনা এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিশেষ প্রতিনিধি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিয়ো গুতেরেসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছেন প্রমিলা প্যাটেন নামের ওই বিশেষ প্রতিনিধি। বিট্রিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ওই প্রতিবেদন পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের যুদ্ধ বা সংঘর্ষে যৌন হয়রানি বিষয়ক ওই বিশেষ প্রতিনিধি চলতি মাসের মাঝামাঝি মিয়ানমার সফর করেছেন। এ সময় তিনি সু চি ছাড়াও দেশটির সেনাবাহিনী ও অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ কিছু বৈঠক করেছেন। তার ভিত্তিতেই তিনি ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

প্রমিলা প্যাটেন বলেছেন, মিয়ানমার সেনা, সীমান্ত পুলিশ এবং বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা রাখাইন রাজ্যে যে ব্যাপক ও বিশেষ কায়দায় যৌন সহিংসতা চালিয়েছে সে ব্যাপারে বাস্তব কোনো আলোচনায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অং সান সু চি।

গত সপ্তাহে মহাসচিবের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে প্রমিলা বলেছেন, ‘এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎকার (সু চির সাথে)। কিন্তু দুঃখজনক হলো- প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাতে বাস্তব কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশটির বৌদ্ধদের শুরু করা সহিংস অভিযানে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) সম্প্রতি এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলেছে, সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা মারা গেছে। জাতিসংঘ এ অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে।

প্যাটেন বলেন, এই ব্যাপারে সরাসরি আলোচনায় না গিয়ে সু চি বলেন, অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপনার এ ব্যাপারে আরো অনেক ভাল বৈঠক হবে।

প্রমিলা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘বৈঠকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নির্যাতন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবিকে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন। তারা আরো মনে করেন, যারা পালিয়ে গেছে তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতেই পালিয়ে গেছে।’

গার্ডিয়ান বলেছে, এর আগে চলমান সহিংসতা নিয়ে মিয়ানমার একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দেশটির সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য পক্ষকে অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ওই প্রতিবেদনকে ‘হোয়াইওয়াশ’ (সাদা রং দিয়ে অন্যান্য দাগ ঢেকে দেওয়া) বলে অভিহিত করেছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

সেইসঙ্গে রোহিঙ্গারাও এই অবস্থায় সেদেশে ফেরত যেতে নারাজ। তাদের দাবি হলো, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা দেওয়া হলে এবং ক্যাম্পে রাখা না হলে তারা ফেরত যেতে রাজি আছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক, যিনি মিয়ানমারে যৌন সহিংসতার বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন, স্কাই হুইলার বলেছেন, মিয়ানমার একটি ‘ভয়ংকর সত্য’কে অস্বীকার করছে।