সচিবালয়ে বসতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভেহিকল স্ক্যানার

বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদার করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিশেষ ভেহিকল স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ের তিনটি প্রবেশপথে এই স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা হবে।

এর মাধ্যমে শুধু গাড়িই নয়, গাড়ির ভেতরের মালামাল এমনকি আরোহীকেও স্ক্যান করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের ব্যয় হতে পারে ৬০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের ভেহিকল স্ক্যানার মেশিন বাংলাদেশে এই প্রথম।

জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। এ মেশিন সরবরাহের জন্য দরপত্রও আহ্বান করে। কিন্তু এর আগে প্রি-বিড মিটিং না করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। পরে এ বিষয়ে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

কিন্তু এ মেশিন সরবরাহে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই বলছে, এবারও এ মেশিনের জন্য কারিগরি যেসব চাহিদার কথা বলা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ। এ ছাড়া যে সময়ের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে তা উপযুক্ত নয়।

ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে বর্তমানে ক্রিসমাসের বন্ধ চলছে। আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ মেশিন সরবরাহের জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় দরপত্র জমা দেওয়ার সময় আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সময় বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মত নন।

জানা যায়, গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে প্রি-বিড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী আট-নয়টি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই দরপত্র জমা নেওয়ার সময় বাড়ানোর প্রস্তাব রাখে। তারা বলছে, এ বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা যাদের আছে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকার যন্ত্র থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়াটাই মুখ্য হওয়া উচিত। কিন্তু এ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে রাজি হননি।

এ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান এ মেশিনের কারিগরি বিষয়ে কিছু শর্ত যোগ করার প্রস্তাব রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখে। চিঠিতে এই মর্মে বলা হয়, যে ধরনের মেশিন চাওয়া হচ্ছে তা একেবারে নতুন পদ্ধতির। এ থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কারিগরি বিষয়ে কতগুলো শর্ত যোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে শর্তগুলোর মধ্যে আবশ্যিকভাবে এমন একটি সফটওয়্যার যোগ করতে বলা হয়, যার মাধ্যমে স্ক্যানিংয়ের সময় জৈব বস্তুর আকার ও ওজন পরিমাপ করা যাবে। স্ক্যান করে পাওয়া চিত্রগুলো বিশ্লেষণেরও সক্ষমতা থাকতে হবে। এ ছাড়া যে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব মেশিন কেনা হবে সেই প্রতিষ্ঠানের অন্তত কয়েকটি দেশে সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ মেশিনে রেডিয়েশনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও রাখা হয়। কিন্তু এসব প্রস্তাব আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলেই সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যেই অত্যাধুনিক এসব ভেহিকল স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যুক্তিপূর্ণ কোনো প্রস্তাব রাখা হলে তা বিবেচনায় নেওয়ার কথা।