জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলায় চাকরি গেল ঢাবি রেজিস্ট্রারের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করায় চাকরি খোয়ালেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। একই ঘটনায় আরেকজন কর্মকর্তাকে পদাবনতির শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে সাময়িকভাবে অব্যাহতি পাওয়া মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত স্মরণিকা উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমান ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে লিখেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
এই লেখার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রেজিস্ট্রারকে তার কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এছাড়াও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গাড়িতে থাকা অবস্থায় তার গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরে বিক্ষোভের মুখে রেজাউর রহমানকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ট্রাইব্যুনাল শেষে তাকে সিন্ডিকেট সভায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রকাশনার কাজে সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার রিফাত আমিনকে পদাবনতি দেয়া হয়।
এছাড়া সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিন্ডিকেট।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে একটি জাতীয় দৈনিকে অধ্যাপক মোর্শেদের লেখা ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ হয়। সেই নিবন্ধে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন।
তিনি লিখেন, ‘ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান, এমনকি বঙ্গবন্ধুও।’ অবশ্য পরে অধ্যাপক মোর্শেদ ওই পত্রিকাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট অংশটুকু প্রত্যাহার করে নেন।
ওই নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করা ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। তারা ওই শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা পোড়ান এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরদিন তারা অধ্যাপক মোর্শেদকে বরখাস্ত করার দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেন।
ওই সময় উপাচার্য দেশের বাইরে থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। উপাচার্য দেশে ফেরার পর ২ এপ্রিল অধ্যাপক মোর্শেদকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন