জীবিত মাকে তাড়িয়ে মৃত্যু সংবাদ পাঠাল মেয়ে

স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল নারায়ণী দাসের। কিন্তু বয়সের ভারে যখন শরীর নুইয়ে পড়ার দশা, সেই সময় আশ্রয় নিলেন মেয়ের বাড়িতে। সেখানে শুরুর দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়ে এবং জামাইয়ের মনে যে লুকিয়ে ছিল মায়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার নিষ্ঠুর এক পরিকল্পনা; সেটা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি বৃদ্ধা নারায়ণী দাস। পেটের সন্তান সহায়-সম্পত্তির লোভে এতটা নির্মম হতে পারে জানা ছিল না তার।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের মাথাভাঙ্গা এলাকায়। নারায়ণী দাসের জীবনের গল্পটা বাস্তবতার কাছে হেরে যাওয়া এক রক্তের বন্ধনের গল্প। সম্পত্তির লোভে জীবিত মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করলেন মেয়ে এবং জামাই।

মা নারায়ণী দাসের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন মেয়ে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার দীর্ঘদিন পর হঠাৎ ফিরে এলেন মৃত মা! কিন্তু সেদিনও তাকে আর আশ্রয় দেয়নি মেয়ে। শেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অশীতিপর এই বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছে মাথাভাঙ্গার শুটুঙ্গা নদীর চরে, একটি ঝুপড়ি ঘরে।

স্থানীয়রা বলছেন, অনেক সহায়-সম্পত্তি ছিল ওই বৃদ্ধার। স্বামী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে একদিন স্বামী মারা যান। ছোট মেয়েকে নিয়েই মাথাভাঙার ৯ নাম্বার ওয়ার্ডে থাকতেন বৃদ্ধা নারায়ণী দাস। কিছু দিন পরে তার ছোট মেয়ের বিহারে বিয়ে দেন। এর পরে মাথাভাঙ্গার সব সম্পত্তি বিক্রি করে মা নারায়ণী দাসকে বিহারে নিজের কাছে নিয়ে চলে যায় তার ছোট মেয়ে।

কিন্তু ভিটেমাটি ছেড়ে এভাবে বিহারে যাওয়ার পরই বিভীষিকা নেমে আসে বৃদ্ধা নারায়ণী দাসের জীবনে। কিছুদিন পরে নিজের মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তার মেয়ে। বৃদ্ধা নারায়ণী ঠিকভাবে চলতে-ফিরতে না পারলেও জীবনধারণের তাগিদে শুরু করেন অন্যের বাড়িতে কাজ। এখানেই শেষ নয়। বছর খানেক পরে বৃদ্ধার ছোট মেয়ে তার আত্মীয়-পরিজনদের জানিয়ে দেয়, মা মারা গেছেন। নিয়ম ও আচার মেনে সামাজিক মতে বৃদ্ধার শ্রাদ্ধ হয়ে যায়।

ছোট মেয়ে ছাড়াও অপর দুই মেয়ে মায়ের শ্রাদ্ধ করে নিজেদের বাড়িতে। কিন্তু শ্রাদ্ধের বেশ কিছু দিন পরে আচমকাই ওই বৃদ্ধা ফিরে আসেন মাথাভাঙ্গায় তার মেজো মেয়ের বাড়িতে। ছোট মেয়ে ও তার জামাই ওই বৃদ্ধাকে পাটনা থেকে শিলিগুড়িতে নিয়ে এসে, মাথাভাঙার একটি বাসে তুলে দিয়ে সটকে পড়েন। বাসের কন্ডাক্টর মাথাভাঙ্গার শনি মন্দির মোড়ে বৃদ্ধাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এলাকার লোকজন চমকে উঠেন তাকে দেখে।

মাকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার পরিবর্তে মেজো মেয়ে নারায়ণী দাসকে বাড়িতে ঢুকতেই দেননি। তিনি বলেন, মায়ের শ্রাদ্ধ করেছেন তারা। এখন কী করে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেবে।

স্থানীয় কিছু মানুষের সহযোগিতায় মাথাভাঙ্গার শুটুঙ্গা নদীর চরে একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধা। ঝুপড়িটি বানিয়ে দিয়েছেন এলাকার মানুষ। বর্তমানে আশপাশের মানুষের দয়ায় কোনোরকমে বেঁচে আছেন এই দুঃখী মা।