জয়দীপ রাউত পরিচালিত ছবি ‘জাগ্রতা’

ধ্বস্ত, নিঃসঙ্গ, নিয়তিতাড়িত মানুষের শোক, তাপ ও শম সমন্বিত আধিদৈবিক এক জীবনের অন্বেষণ জয়দীপ রাউত।

তিনি কেবল একজন দুর্দান্ত পরিচালকই নন একই সাথে গীতিকার, শিল্পী, কবি ও লেখক সত্ত্বায় পরিপূর্ণ। অলৌকিক, সোহাগ ও জাগ্রতা ছবিতেও তার লেখা তিনটি গান রয়েছে। তার লেখার উদৃতি ও চিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় একান্ত গোপন রক্তপাত ও বিরহের সন্তাপ। তার বহুমুখী প্রতিভার মতোই একই ভাব ফুটে উঠেছে তার নির্মাণেও। আধ্যাত্মিক অবনমন, ব্যক্তির মনোজগতের এক ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গতা, প্রেমের জন্য তীব্র আর্তি, প্যাশন ও পরাজগতের প্রতি এক মরমিয়া আহবান, আবেগ ও আততির এক রক্তাক্ত সংমিশ্রণ।

জয়দীপ রাউত নামেই যেন লুকিয়ে আছে এক লেখক সত্ত্বা। তাইতো তার প্রতিটি নির্মাণ আমাকে মুগ্ধ করে, একই সাথে তার সৃষ্টির সকল ছবিই আমার ভালো লাগে, কোনটা একটু বেশি কোনটা একটু কম। বনফুল অর্থাৎ সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের রচিত গল্প জাগ্রত দেবতার গল্প অবলম্বনে ছবির চিত্রনাট্য হয়েছে। ক্যামেরাতে ধারণকৃত অজপাড়াগাঁ, নদী, উদার আকাশের নিচে কত সরল প্রকৃতি মানুষের ঈশ্বর তথা পরস্পরের ভালোবাসায় নিবেদিতপ্রাণ জীবন সমৃদ্ধির অন্ত পাওয়া ভার।

এমনই এক চলচিত্র নির্মাণ করেছেন জয়দীপ রাউত বনফুলের গল্প ‘ জাগ্রত দেবতা ‘ অবলম্বনে সাহিত্য নির্ভর লং শট ছবি ‘জাগ্রতা’ কে কেন্দ্র করে। ছবিটির প্রযোজনা করেছেন তাপস রায় ও কবিতার কক্ষপথ সংগঠন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। বনফুলের মূল গল্প জাগ্রত দেবতায় শিব পুজো অনুকরণে “জাগ্রতা” ছবিটি সৃষ্টি হলেও এখানে শিব পুজো নয় কালী পুজোকে দেখানো হয়েছে। প্রতিবছর গ্রামে কালী পুজোয় কেউ না কেউ পাগল হয়। কিন্তু এই বছর কে পাগল হলো সেই নিয়েই এক হুলস্থুল কাণ্ড। কিছুদিন আগে লোক মুখে আমরা কলকাতার ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিতে যাকে পাগল হতে শুনেছিলাম তবে কি এই সেই মানুষ। হ্যা, অবাক হলেও সত্যি আমাদের প্রিয় অভিনেতা রজতাভ দত্তের পাগল হওয়ার ঘটনাটি সত্যি হলেও বাস্তবে নয় ‘জাগ্রতা’ ছবিকেই কেন্দ্র করে অভিনীত হয়েছে। এছাড়াও ছবিতে আঠারোটি ক্যারেক্টার আছে যা মূল গল্পে নেই সেকারণেই ছবিতে লুকিয়ে আছে হাজারো রহস্য ।

রজতাভ দত্তের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার মতো কিছুই নেই। তিনি অত্যান্ত পরিচিত ও বিখ্যাত ভারতীয় বাংলা চলচিত্র, ধারাবাহিক এবং থিয়েটারের এক বিখ্যাত অভিনেতা। চলচিত্রের তিনটি গানের একটি শ্যামাসংগীতও গেয়েছেন এই বিখ্যাত অভিনেতা। একই সাথে অভিনয় করেছেন নিশাত ফারহান, অনুজয় চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অনুজয় চট্টোপাধ্যায় নাট্যমঞ্চে খুবই বিখ্যাত একজন মানুষ, তাঁর অভিনীত বিভিন্ন ওয়েব সিরিজও দেখেছি। প্রসূন চ্যাটার্জির পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘দোস্তজী’ ছবিতেও অনুজয় চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন।

‘জাগ্রতা’ ছবির মূল চরিত্রে আছেন কলকাতার দমদমের মেয়ে নিশাত ফারহান। তার এই ছবির মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ ঘটে। নিশাত ফারহান এয়ার হোস্টেজ হতে চেয়েছিলেন, সেই নিয়েই তার পড়াশোনা। যে মেয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সে আজও ডানা মেলে আকাশে উড়তে চান তবে এয়ার হোস্টেজ হিসেবে নয় একজন অভিনেত্রী হিসেবে। রজতাভ দত্তের সাথে কাজ করতে যেয়ে প্রথমে অস্বস্থি ও পরবর্তীতে আন্তরিকতায় মুগ্ধ হোন নিশাত ফারহান। পরিচালকের মতে, ‘নিশাত এর আগে অভিনয় করেনি, এই প্রথম। কয়েকদিন ওয়ার্কশপ করেছেন, খুব পরিশ্রম করেছেন। আর প্রথম সিনেমায় সত্যি ভালো অভিনয় করেছেন।’

জয়দীপ রাউত পরিচালিত ‘অলৌকিক’, ‘সোহাগ’, ‘কালী’ ‘মল্লার যেখানে নামে’ ‘অভিসার’, ‘দ্য লোড’, ‘তিনবিন্দু’ প্রমুখ ছোট বড় আরও অনেক চলচিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী কথা নন্দী। তার প্রতিটি ছবিই রয়েছে জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। নানা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

পরিচালক জয়দীপ রাউত দীর্ঘজীবী হোন, ওর সৃষ্টি আমাদের জীবন আরও সমৃদ্ধি করুক।