ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান সমাপ্ত
ঝিনাইদহ সদরের দুই জঙ্গি আস্তানায় চালানো অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার সকাল ৯টায় অভিযান শুরু হয়। এ সময় সুইসাইডাল ভেস্ট ও ডাইনামাইট স্টিক নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে অভিযান প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। ঢাকা থেকে আসা র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রথম দিনের অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন ঝিনাইদহ র্যাব ৬ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মনির আহমেদ।
সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের দুটি বাড়ি সোমবার গভীর রাত থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখে র্যাব। র্যাব ক্যাম্প থেকে ৫০০ গজ দূরে দুটি বাড়িতে সকাল ৭টার দিকে অভিযান শুরু হয়। একটি বাড়ি মহেশপুরের বজরাপুরে নিহত জঙ্গি তুহিনের বড় ভাই সেলিমের এবং অপর বাড়িটি তার চাচাতো ভাই প্রান্তের।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত জঙ্গি তুহিনরা ৫ ভাই দুইবোন। এরমধ্যে ২ ভাই দেশের বাইরে থাকে, সেলিম আগে বিসিকে শ্রমিকের কাজ করত। এখন বাড়িতেই থাকতো। আর তুহিন কিছুদিন আগে মহেশপুরের বজরাপুরে নিহত হয়। বাড়িতে এখন একটা ছোট ভাই আছে।
অন্যদিকে প্রান্তরা ২ ভাই ২ বোন। প্রান্ত সবার বড়। প্রান্ত সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। প্রান্ত ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে পড়াশোনা করে।
নব্য জেএমবির সদস্য প্রান্ত ও সেলিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত অভিযানে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট অ্যাকটিভ অবস্থায় প্রান্তর বাড়ির পাশের বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নিও জেল এক্সপ্লুসিভ ১৮টি, ১টি এন্টি পারসোনাল মাইন সদৃশ্য বস্তু, ১৮৬টি পিভিসি সার্কিট, ১৫/২০টি ডাইনামাইট স্টিক উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রান্ত ও সেলিমকে আটক করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান চলছে। তারা দু’জনই নব্য জেএমবির সদস্য।
এর আগে জেলার মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে ৭ মে সকাল থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে সিটিটিসি ইউনিট বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী হামলায় দুই জঙ্গি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম, এসআই মুজিরুর রহমান ও ডিএসবির এসআই মহসীন। এ সময় একতলা ওই বাড়ির মালিক জহুরুল ইসলাম, তার ছেলে জসিম ও ভাড়াটিয়া আলমসহ চারজনকে আটক করা হয়।
একই দিন জেলা সদরের নেবুতলায় মৃত শরাফত হোসেনের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এর আগেই শরাফত হোসেনের দুই ছেলে শামীম (২২), হাসান (৩৫) ও তাদের এক বন্ধুকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৮ মে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮টি বোমা, ১টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৬টি গ্রেনেড পাওয়া যায়।
এর আগে ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সাউথ প’ বা দক্ষিণের থাবা। প্রায় ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরি রাসায়নিক ভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের পিস্তল, একটা ম্যাগাজিন, সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পাঁচটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়।
অপারেশন ‘সাউথ প’ সমাপ্ত ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এ বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। বাড়িটিতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করত বলেও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন