ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে আগুনে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি!
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে গুলশানের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের কাঁচাবাজার৷ শনিবার ভোরের এ অগ্নিকাণ্ডে বাজারটির প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ী তাদের সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছেন৷ বনানীতে আগুনের দু’দিনের মাথায় ঘটল এই ঘটনা৷
শনিবার ভোরের এ অগ্নিকাণ্ডে বাজারটির প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ী তাদের সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছেন৷ বনানীতে আগুনের দু’দিনের মাথায় ঘটল এই ঘটনা৷
মার্কেটটি গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার নামে পরিচিত৷ ভোর ৫টার পর ওই বাজারে আগুন লাগে৷ ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে৷ কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ওই বাজারের ৩০০ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷
২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি এই কাঁচাবাজাটিতে আগুন লেগেছিল আরেকবার৷ তখনো কেনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা পায়নি৷
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ৷ ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেছেন, ‘‘মার্কেটে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷ পানির সংকট ছিল৷”
তিনি বলেন, ‘‘২০১৭ সালের আগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এ সংক্রান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা পরবর্তীতে অনুসরণ করেনি বাজার কর্তৃপক্ষ৷”
এদিকে, বাজারটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘এটা ডিএনসিনি’র মার্কেট৷ তারা ব্যবস্থা না করলে আমরা কি করতে পারি?”
আগুনে পোড়া মার্কেটেএখন ব্যবসায়ীদের কান্না আর আহজারি৷ সব হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা৷ বাজারটিতে ১৭ বছর ধরে মশলার ব্যবসা করেন ফকির আহমেদ৷ দুই বছর আগে যখন এই বাজারে আগুন লেগেছিল, এ ব্যবসায় তখন তাঁর প্রায় কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল৷ ছিল নিজস্ব গোডাউন৷ আগুনে তাঁর পুরো দোকান আর গোডাউন পুড়ে যায়৷ এরপর ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য তিনি কোনো ব্যাংক ঋণ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো সহায়তা পাননি৷
ফকির আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা ও ঋণ করে আমি আবার ব্যবসাটা শুরু করি৷ দোকানে ২৫ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি মশলা ছিল৷ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ পথে বসে গেছি আমি৷ আগেরবার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম৷ এবার মনে হয় আর পারবনা৷ কে সহায়তা করবে৷ কে আমাকে টাকা দেবে?”
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে৷ তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে৷ আমার কাছে জমানো কোনো টাকাও নেই৷”
ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজরের সব দোকানই পুড়ে গেছে৷ আর সবার কষ্টের গল্পটা একই রকম৷
সৈয়দা রাবেয়ার সুলতানার ছিল ক্রোকারিজের দোকান৷ ২০১৭ সালে এই মার্কেটে আগুনে পাঁচটি দোকান পুড়ে গিয়েছিল তাঁর৷ এরপর ১২ লাখ টাকা ঋণ করে তিনি আবার ব্যবসা শুরু করেন৷আর এবারের আগুনেও তাঁর পাঁচটি দোকানই পুড়ে গেছে৷ তিনি তাঁর স্বামী, সন্তান ও একজন কর্মচারী নিয়ে দোকানগুলো দেখাশোনা করতেন৷
শনিবার সকালে রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘‘আমরা ঋণ করে ব্যবসা করি৷ কীভাবে টাকা পরিশোধ করবো বুঝতে পারছি না৷ সব দোকান পুড়ে ছাই৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারি না, প্রতিবছর এখানে আগুন কেন লাগে? ভোর পাঁচটায় আগুন লাগার খবর শুনে ছুটে আসি৷ পাঁচটি দোকানের সব মালামাল পুড়ে গেছে৷ কিছুই বাঁচাতে পারিনি৷”
‘‘আমি কি এখন নতুন করে ব্যবসা করার টাকা যোগাড় করবো, নাকি ঋণ করা টাকা শোধ করবো?” প্রশ্ন করে রাবেয়া জানান সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন৷
একই কথা জানান আব্দুর রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী৷ তাঁর তিনটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
প্রসঙ্গত, গুলশান-১ এর ডিএনসিসির এই কাঁচাবাজারটির অবকাঠামো বলতে মূলত টিন ও বাঁশ৷ ছোট সাইজের এই দোকানগুলো আকার গড়ে ৫ ফুট বাই ৭ ফুট৷ আর সিটি করর্পোরেশন থেকে লিজ নিয়ে মার্কেটটি গড়ে উঠেছে অনেক আগে৷ এর সামনেই বহুতল মার্কেট৷ তবে যারা দোকানগুলোর মালিক তারা যে সবাই এখানে ব্যবসা করেন তা নয়৷ অনেকেই ভাড়া দিয়ে রেখেছেন৷ ফলে যারা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন তাদের বিপদ আরো বেশি৷ দোকানের মালিকেরা হয়তো অর্থের সংস্থান করতে পারেন৷ কিন্তু যারা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের কেউ সহায়তা করতে চানানা৷ কেননা তারা স্থায়ী নন৷
বাজারটির সভাপতি দিল মোহাম্মদ এখানে ব্যবসা করেননা৷ তাঁর ২০-২২টি দোকান আছে৷ সবগুলোই ভাড়া দেয়া৷ দিল মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মার্কেটের ২১১টি দোকানের সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ এখানে শাক-সবজি, মাংস, মুরগিসহ নানা রকমের মনোহরি পণ্যের দোকান ছিল৷ কিছুই রক্ষা পায়নি৷ তবে একই মার্কেটের আরো ৮০টি দোকান আছে বাইরে৷ সেগুলো রক্ষা পেয়েছে৷”
তিনি বলেন,‘‘২০১৭ সালের আগুনেও সব দেকান পুড়ে গিয়েছিল৷ সিটি কর্পোরেশ কর্তৃপক্ষ তখন সহায়তার কথা বললেও কোনো সহায়তা করেনি৷ আমরাই ধার দেনা করে বাঁশ, টিন ও ত্রিপল দিয়ে আবারো মার্কেটটি তৈরি করেছি৷ ব্যবসায়ীরা কষ্ট করে পুঁজি জোগাড় করেছেন৷ কিন্তু দুই বছরের মাথায় আবার সব শেষ হয়ে গেল৷”
জানা যায়, সহায়তার আশ্বাস এবারও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু সহায়তা শেষ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন করবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ব্যবসায়ীরা৷ এই জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের বহুতল মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাব প্রসঙ্গে দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘‘বহুতল মর্কেট করা হলে আমাদের আপত্তি নেই৷ তবে আমাদের রেখেই তা করতে হবে৷ আমাদের সরিয়ে নয়৷”
এদিকে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের৷ এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যাতে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন তার জন্য সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি৷
উল্লেখ্য, আগুনে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা৷
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন