ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে: পানি সম্পদ সচিব

পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান বলেছেন, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের নদী অববাহিকার ৭১ শতাংশ প্লাবন ভূমি রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারলে প্রাণ এবং সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। আর এজন্যই দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল করতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নততর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে DANIDA অর্থায়িত গবেষণা প্রকল্প বাংলাদেশের বর্ধিত বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ পরিষেবার সক্ষমতা উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

সচিব বলেন, ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ৫ দিনের আগাম বন্যা পূর্বাভাস উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করে উন্নততর প্লাবন মানচিত্রের সাহায্যে বন্যা শুরু হওয়ার তিন দিন থেকে তিন ঘণ্টা সময় আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন অ্যান্ডার্স কার্লসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক নুরুল ইসলাম সরকার- এবং মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঁইয়া, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা)।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল পদ্ধতিটি চালু করতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), এটুআই, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগল, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১৯৭২ সালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশ জুড়ে ৫৬ টি পানির স্তর পর্যবেক্ষণ স্টেশন রয়েছে।

কর্মশালাটি বন্যার পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ পরিষেবাগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলি চিহ্নিত করে এবং পরিষেবাগুলির সক্ষমতা উন্নত করার উপায় অনুসন্ধান করে।
কর্মশালাটি ‘ঢাকা সিটি বন্যা পূর্বাভাস মডেল’ এবং ‘আন্তর্জাতিক বন্যা প্রবাহ পূর্বাভাস মডেল’ উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বিদ্যমান বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা ঢাকা শহরের আশেপাশের বেশ কয়েকটি স্টেশনে বন্যার পূর্বাভাস এবং সতর্কতা প্রদান করে।

বন্যা পূর্বাভাস মডেলের মাধ্যমে, শহরের নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিতে পারে। এই শহুরে বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা শহরের মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে দেবে, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাশ্রয় করবে, পরিষেবা ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমবে। কর্মশালায় জানানো হয় যে ঢাকা শহরের জন্য একটি ব্যাপক বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ হতে চলেছে।

কর্মশালায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, দূতাবাস ও দাতা সংস্থা, পানি ও উপকূল বিশেষজ্ঞ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন। আইডব্লিউএম উপনির্বাহী পরিচালক জনাব এসএম মাহবুবুর রহমানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে কর্মশালা সমাপ্ত হয়।