ঢাকায় আসছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঢাকায় আসছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে তিনি ঢাকা আসবেন। প্রায় ১০ বছর পর যুক্তরাজ্যের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করছেন। এর আগে ২০০৮-এ যুক্তরাজ্যের তৎকালিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড ঢাকা সফর করেছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এই সফরের সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে কার্গো অবরোধ তুলে নেওয়ার বিষয়টির চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলেও ধারণা করছেন কূটনীতিকরা। এছাড়া ব্রেক্সিট ও ভিসা বিষয়টি নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার জন্য যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সফরে আসছেন। এই প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যখন কোনও একটি দেশের কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য দেশ সফর করেন, সেটি সম্পূর্ণভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই করেন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। এই সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারে উন্নীত করার জন্য কাজ করছি আমরা।’
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল। তারা জোরালো ভূমিকা রেখেছে। এই প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইন নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাজ্য আগ্রহ প্রকাশ করলে সেখানে আলোচনা হয়।’ তিনি আরও বলেন,
‘শুধু নিরাপত্তা পরিষদেই নয়, তারা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও সহায়তা করেছে।অর্থ সাহায্যও দিয়েছে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বৈঠকের সময়ে বরিস জনসন জাতিসংঘ সদর দফতরে পৃথকভাবে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ছাড়াও অনেক দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
বাণিজ্য সহযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার। সেখানে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শুল্কনীতি মেনে চলছে কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তারা এই জোট থেকে বের হয়ে যাবে। বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পরেও যেন বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। তিনি বলেন, এর আগেও আমরা এ বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে তুলেছি। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্রেক্সিটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় চার বিলিয়ন ডলার। এর সিংহভাগই বাংলাদেশের রফতানি আয়।
ভিসা ও অভিবাসন
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত কোনও জটিলতা না থাকলেও বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি এই সফরের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হবে। এই প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ভিসা দেওয়ার হার কম। তারা অনেক সময় নিচ্ছে।আমাদের পক্ষ থেকে বলা হবে, আমাদের ছাত্ররা যেন অবাধে যুক্তরাজ্যে পড়তে যেতে পারে, যুক্তরাজ্যের কারি ইন্ডাস্ট্রিতে যে লোক দরকার, সেসব লোক যেন বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হয়।’
কার্গো যাতায়াত
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সব ধরনের কার্গো পাঠানোর ওপর ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য সফর করে। ওই সময় দুইপক্ষই একমত হয় যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের আরেক জন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বরিস জনসনের সফরের সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন