রাজনীতিতে কি আবারও সহিংসতার ইঙ্গিত?

সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, প্রত্যাশিত সময়ে জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করতে না পেরে ২০১৪ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার পর এবার ‘নির্দলীয়’,‘সহায়ক’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল অনড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী নির্বাচনী মাঠ গরমের মৌসুম আসবে বছর শেষে। তবে তাদের আশঙ্কা নির্বাচনী মৌসুমের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই এবার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

কারণ ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে। এই রায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের পক্ষে গেলে নির্বাচনী উত্তাপ কিছুটা পিছিয়ে যাবে। কিন্তু রায় বিপক্ষে গেলে নির্বাচনকে টার্গেট করে বছর শুরুতেই পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে যাত্রা করতে পারে।

খালেদার রায় ঘিরে নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন: সামনে ৮ ফেব্রুয়ারি যে রায় ঘোষণা হবে সেটি নিয়ে একধরণের রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই রায় পক্ষে গেলে কিংবা বিপক্ষে গেলে দু’রকম পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং রায়টি সামনের নির্বাচনকে বেশ ভালোভাবে প্রভাবিত করবে।

‘রায় পক্ষে গেলে বিএনপি হয়তো নির্বাচনে যেতে আরও সক্রিয় হবে। কিন্তু রায় বিপক্ষে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে বিএনপি আগে থেকেই আন্দোলনের কথা বলছে। এই আন্দোলন দিয়ে তারা রাজনৈতিক মঞ্চ-রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে চাইতে পারে।’

শুধু সরাসরি দলীয় রাজনীতি, রাজপথ উত্তপ্ত হচ্ছে তা নয়। নির্বাচনী বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

তবে এখনই নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক হাসানুজ্জামান।

তিনি বলেন: মনে রাখতে হবে যে সামনের নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে কিংবা তারও পরে। নির্বাচন তাই আসতে বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। আমার মনে হয় যে এখনি অস্থিতিশীলতা তৈরির পায়তারার কথা বলা হলে সেটা অগ্রিম কথা হয়ে যাবে।

তবে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা, পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলাসহ সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতি সহিংসতার দিকেই যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন: নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা কথা চলছে। বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকেই বিতর্ক চলছে। যেহেতু আবার নির্বাচনের বছর সেহেতু দলগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইবে। বিশেষ করে বিএনপি চাইবে টিকে থাকতে এবার যেকোনোভাবে দাবি আদায় করতে। ৮ তারিখের রায়ে খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে তার দল-সমর্থক মাঠে নামবে। নির্বাচন এবং এই রায় একই বছরে হচ্ছে। কাজেই দুটো ঘটনা একই সময়ে ঘটতে যাচ্ছে বলে পরিস্থিতির তীব্রতা বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছি।

কিন্তু ২০১৪ সালের মত নির্বাচন বর্জন করে সহিংস আন্দোলনে নামলে এবারও বিএনপি জনসম্পৃক্ততা হারাতে পারে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
তিনি বলেন: ২০১৪ সালে আসলেই পরিস্থিতি চরম নেতিবাচক হয়ে উঠেছিলো। ওই সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের ওইরকম কর্মসূচিতে জনগণ নেমেছিলো কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এবার যদি কেউ আন্দোলনে নামে তবে ২০১৪ সালের বিষয়টি স্মরণে রাখবে বলে আশা করি। আন্দোলন যদি টেকসই না হয় তবে সেটা বুমেরাং হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের শুরু থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের শঙ্কা-সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে এবছর। তবে এখনো নির্বাচনকালীন সরকারের বিতর্ক দূর হয়নি বরং তুঙ্গে উঠতে শুরু করেছে। বুধবার সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠনের বিধান নেই।

এর মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা যোগ করেছে খালোদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসন্ন রায়। রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার মোড়ে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজন ভ্যানের তালা ভেঙে আটক দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপর ওই রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার আদালত পুলিশ ভ্যানে হামলা ও নাশকতার ৪ মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে ৫৯ বিএনপি নেতা-কর্মীকে ২ থেকে ৩ দিন করে রিমান্ড এবং জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অসুস্থ থাকায় তাকে আদালতে তোলা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষও তার রিমান্ড আবেদন জানায়নি। আদালত গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।