তাজিয়া মিছিলে কাঁচি-ছুরি নিষিদ্ধ
আশুরা উপলক্ষে যে তাজিয়া মিছিল বের হবে সেখানে কাঁচি, ছুরি, তলোয়ার জাতীয় ধারালো অস্ত্র এবং সবধরনের পটকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া। এছাড়া শোভায়াত্রায় ঢাল, শরকি, দা, বল্লভ ব্যবহার করা যাবে না। আগামী রবিবার ১০ মহররম তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার হোসেনী দালানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শকালে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন প্রতি বছরের মতো শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান আশুরা উপলক্ষে ইমামবাড়া থেকে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এই তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, প্রত্যেকটি ইমামবাড়া সিসিটিভির আওতায় থাকবে। প্রতিটি গেটে থাকবে আর্চওয়ের ব্যবস্থায়। ইমামবাড়ায় প্রবেশ করতে হলে আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে তল্লাশির মাধ্যমে প্রবেশ করতে হবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ইতোমধ্যে কোনো কোনো ইমামবাড়া থেকে শোভাযাত্রা হচ্ছে। ১০ মহররমকে ঘিরে বড় তাজিয়া মিছিল হবে। সেদিকে নিরাপত্তার জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি ইমামবাড়া সুইপিং করা হবে। আমাদের স্পেশাল ব্যাঞ্চ, ডিএমপির ডগ স্কোয়াড এবং র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। আমরা তাজিয়া মিছিলকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসব।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন রুটে আমাদের রুটটপ, ব্যারিকেড ব্যবস্থাপনা, পিকেট ব্যবস্থাপনা থাকবে। এ ব্যাপারে কাজ করছে আমাদের সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। যেকোনো অপতৎপরতা রোধে গোয়েন্দা কাজ করছে। মিছিলের আগে-পিছে পুলিশ থাকবে। মিছিলের চিত্র ধারণ করার জন্য ক্যামেরা থাকবে। কারবালায় থাকবে ডুবুরি, ফায়ার সার্ভিস।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘মিছিলটা যেন সময় মত শুরু হয় সেজন্য আমরা আয়োজকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে মিছিলটি শুরু এবং শেষ করতে পারব। এবার শারদীয় দুর্গাপূজার সঙ্গে আশুরা এক সঙ্গে হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সমন্বয় করতে হয়েছে। শোভাযাত্রা এবং আশুরা মিছিল যাওয়ার সময়ে উভয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনারা জানেন পাইক নামে একটি শ্রেণি রয়েছে যারা মাতম করে। কোনো কোনো পাইক দা, কাঁচি, ছুরি তলোয়ার, বাজি, পটকা নিয়ে মাতম করে। সেইসব কর্মকাণ্ড আমরা এবার নিষিদ্ধ করেছি। কোনো পাইক দা, কাঁচি, তলোয়ার নিয়ে মিছিলে যেতে পারবে না। কোনো বহিরাগত মিছিলে প্রবেশ করতে পারবে না। যারা মিছিলে যেতে চায় তাদের ইমামবাড়া, বিবিকা রওজা, বড়কাটারা, হোসেনী দালান থেকে মিছিলে প্রবেশ করতে হবে। শোভাযাত্রায় যেকোনো ধরনের ধাতব বস্তু পরিধান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১২ ফুটের উপরে নিশান ব্যবহার করা যাবে না।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘শোক মিছিল যে রুটে যাবে সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ঢাকা সিটি করপোরশেনকে অনুরোধ করা হয়েছে। আয়োজকদের নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। তাদের নিদিষ্ট পরিচয়পত্র রয়েছে যারা পুলিশকে তল্লাশির কাজে সহযোগিতা করবে। তাজিয়া শোক মিছিয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হবে। বড়কাটারা এবং হোসেনী দালান থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শেষ হবে কারবালা অর্থাৎ ধানমন্ডি লেকে। সেখানেও রয়েছে ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এবারের তাজিয়া মিছিল বড় কাটারা এবং হোসেনী দালান থেকে যে তাজিয়া মিছিল বের হবে সেগুলো সমন্বিত হয়ে একটি রুটে কারবালার দিকে যাবে। সকালবেলা হোসেনী দালান ইমামবাড়া থেকে বের হবে। এবার পরিবর্তন আছে বিবিকারওজা থেকে যে মিছিলটি বিকালে বের হতো এবার সেই মিছিল বের হবে দুপুর দুইটায়।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই এদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের, প্রত্যেকটি ধর্মের অনুসারীদের তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করার অধিকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিরাপদ করার জন্য আনন্দমুখর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে, ডিএমপির পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রস্তুত থাকবে আমাদের সোয়াট এবং গোয়েন্দা সদস্যরা। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে তারা সাড়া দেবে।
এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, মো. শাহাব উদ্দিন কোরেশী এবং মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন