তারেককে ফেরাতে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি করতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার অনেকদিন ধরেই বলছে যে তারা বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করতে চান।

কিন্তু বাংলাদেশের এই উদ্যোগের ব্যাপারে সম্প্রতি ব্রিটেনের এক মন্ত্রী ঢাকা সফরে এসে যা বললেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুরোধে যথেষ্ট সাড়া মেলেনি।

ব্রিটেনের ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের একজন মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড দুদেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এখন বলছে, প্রয়োজনে এরকম চুক্তি করতেও তারা প্রস্তুত।

তারেক রহমান গত প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে আছেন। ২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে একটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন তার বিরুদ্ধে অনেক কটি দুর্নীতির মামলা রুজু হয়।

২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো মামলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাসহ আরও কিছু মামলা।

এর মধ্যে তিনি তিনটি মামলায় দণ্ড পেয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই বাংলাদেশের আদালতে এসব মামলার বিচারে তার সাজা হয়। এখন বাংলাদেশে ফিরলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করতে হবে।

ব্রিটেনকে কি অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের তরফ থেকে তারেক রহমানের ব্যাপারে ব্রিটেনকে যে চিঠি দেয়া হয়, তাতে কী অনুরোধ করা হয়েছিল?

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তারেক রহমান যে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, সেই মামলার বিষয়গুলো তুলে ধরে যুক্তরাজ্যের কাছে আবেদন করা হয়।

“আমরা ব্রিটিশ সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের যে সব তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে। আদালতের রায়ে তার ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে এবং তার অপরাধের ব্যাপ্তি ও প্রভাবের ব্যাপারে যেসব পর্যবেক্ষণ এসেছে, সেগুলো জানিয়ে আমরা তারেক রহমানকে সোজা বাংলায় ফেরত চেয়েছি।”

“আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করা হয়েছে।”

ঢাকায় এসে কী বলেছিলেন ব্রিটিশ মন্ত্রী

তারেক রহমানকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ যে অনুরোধ জানিয়েছে, সে বিষয়ে ব্রিটেনের দিক থেকে কোন নিশ্চিত খবর প্রথম জানা যায় ব্রিটেনের ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের মন্ত্রী মার্ক ফিল্ডের ঢাকা সফরের সময়।

ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় মিস্টার ফিল্ডকে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কেসের ব্যাপারে তারা কথা বলেন না। তবে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে বাংলাদেশের দিক থেকে তারেক রহমানকে ফেরত পাঠানোর একটি অনুরোধ তারা পেয়েছেন।

এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের দুটি কথা বলেছিলেন। প্রথমত: বিষয়টি ব্রিটেনের হোম অফিস এবং আদালতের ব্যাপার, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং আইন অনুযায়ীই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। দ্বিতীয়ত তিনি বাংলাদেশ এবং ব্রিটেনের মধ্যে যে কোন বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

ব্রিটেনের এই বক্তব্যের পর এখন কী বলছে বাংলাদেশ

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, দুদেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার বিষয়টি তারেক রহমানকে ফেরত পাঠানোর পথে বাধা হতে পারে না।

“যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন বলছে যে এটা হোম অফিসের বিষয় এবং এটা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত, তখন আমাদের কথা হচ্ছে যে এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আরেকটু ভাল সহযোগিতা আশা করি । কারণ এটা বলে দায়িত্ব এড়ানোর এখানে কোন সুযোগ নেই।”

মি: আলম সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ব্রিটেনকে সহযোগিতা করার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময় অনেক ব্রিটিশ নাগরিকের নানা অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের কনস্যুলার সেবা নেয়ার সুযোগ দিয়েছি, আইনগত সব সুযোগ দিয়েছি। এই বন্ধুত্বের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

আর দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার যে প্রশ্ন এসেছে, সে ব্যাপারে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, “এক দেশ থেকে আরেক দেশে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ফেরত নিতে চুক্তি না থাকাটা কোন বাধা হয় না। এর আগে আমরা একাধিক দেশের নাগরিককে ফেরত দিয়েছি, এরকম নজির আছে। আর চুক্তির কথা বললে, আমরা সেটা করার জন্যও প্রস্তুত রয়েছি।”

বিএনপি কিভাবে দেখছে

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে জেলে যাওযার পর ব্রিটেনে থাকা তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। মি: রহমান দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।

“তাদের যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বিএনপি বা এর নেতৃত্বের ওপর এবং জিয়া পরিবারের সদস্যদের ওপর, সেটাকে চরিতার্থ করার জন্যই তারা দীর্ঘদিন ধরে এধরণের কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসার জন্য আছেন। আমরা জানি যে, নিয়মিত তাকে থেরাপি নিতে হয়। সেক্ষেত্রে তাঁকে ফেরত নিয়ে আসার চেষ্টা অমানবিক।”

“আর আইনি বিষয় হলে আমরা আইনগত ভাবেই দেখব।”

মি: আলমগির এটাও বলেছেন যে, ব্রিটেন থেকে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে তারা বিশ্বাস করেন।

এদিকে লন্ডন থেকে অভিবাসন সম্পর্কিত একজন আইনজীবী সৈয়দ ইকবাল বলছিলেন,বিষয়টি যুক্তরাজ্য সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এটি আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।