তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিতে আ’লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিডিও কনফারেন্সে সাক্ষাৎকার নেয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে আওয়ামী লীগ।

রোববার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ অভিযোগ সংবলিত লিখিত আবেদনটি হস্তান্তর করে।

অভিযোগে তারা বলেন, তারেক রহমানের টেলিকনফারেন্সে দেয়া বক্তব্য এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণ নির্বাচনী আইন এবং সর্বোচ্চ আদালতের সুষ্পষ্ট নির্দেশনার লঙ্ঘন। একই সঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার না করতে অনুরোধ জানান তারা।

ক্ষমতাসীন দলের এই প্রতিনিধি সন্ধ্যায় ইসিতে এসে তাদের অভিযোগ দাখিল করার আগে বিকালে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল তালুকদার এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারেকের বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি কেউ প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। যদি কেউ তথ্য প্রমাণসহ আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা আইনের মধ্যে থেকে যদি কিছু থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব। আর যদি আইনের ভেতর কিছু না থাকে, তাহলে আমরা নিজেরা (কমিশন) বসে কী করতে পারি সেটা পর্যালোচনা করে দেখে তার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে রোববার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেন।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কর্নেল (অব.) ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি স্কাইপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু আদালত বলেছেন, একজন পলাতন আসামি হিসেবে তারেকের বক্তব্য কোথাও প্রচার হবে না। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদেও থাকতে পারবেন না।তার স্কাইপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং বক্তব্য প্রদান নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন। এটা হতে পারে না। আশা করি, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

তিনি আরও বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের আমরা দেখেছি, সুপ্রিমকোর্টে সারাদিন নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। এই লঙ্ঘন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস। এটা চলতে থাকলে নির্বাচন আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ বিষয়ে দ্রুত শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনও যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।

এ সময় কর্নেল ফারুক আরও বলেন, আদালতের নির্দেশনা সবাইকে মানতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। এই খবর গণমাধ্যমে এসেছে। একজন পলাতক আসামি বক্তব্য গণমাধ্যমে আসতে পারে না। গণমাধ্যমও সেই বক্তব্য প্রচার করতে পারবে না বলে আদালতের নির্দেশনা আছে। তারেক রহমান এই টেলিকনফারেন্স করে আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। তিনি আইন মানছেন না। নির্বাচন আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, দেশের প্রচলিত আইন মানতে হবে। তাই আচরণবিধিও লঙ্ঘন হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক দলের অপরাধ ও নীতি বহির্ভূত। তাদের এই টেলিকনফারেন্স করতে দেয়া উচিত হয়নি। একই সঙ্গে সেই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করাও উচিত হয়নি। গণমাধ্যম যেন তার বক্তব্য প্রচার না করে সে অনুরোধ করব।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলে অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, রিয়াজুল কবীর কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার বিষয়ে আমি জাতির কাছে বলতে এখন পারি, একজন দণ্ডিত পলাতক আসামি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে কিনা?

মন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, দুটি মামলায় দণ্ডিত পলাতক এ রকম কেউ এভাবে ভিডিও কনফারেন্স করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে কিনা- আমি সেটি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইছি।

ওবায়দুল কাদেরের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই আচরণবিধি ভঙ্গ করছে।