‘তোকে অনেকবার বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছি, আর নয়’

‘তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস, তোকে অনেকবার বেঁচে থাকার জন্য সুযোগ দিয়েছি; আর সুযোগ নয়’ এমন হুঙ্কার দিয়ে দশ-বার জন ব্যক্তি আনোয়ারা উপজেলার কলেজ ছাত্র মো. মনসুরকে মেরে তাঁর বাম পায়ের কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত আঘাত করে মারাত্মক ভাবে থেঁতলানো ও জখম করেছেন।

ভিকটিম মো. মনসুর (২১) আনোয়ারা উপজেলার মাহাজার বাড়ির মো. লোকমানের ছেলে। ঘটনা ঘটেছে আনোয়ারা থানাধীন জয়কালী বাজারস্থ এক এটিএম বুথের সামনে। পরে তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে আনোয়ারা সরকারি কলেজের মাঠে নিয়ে মারধর করা হয়।

এ ঘটনায় ২২ মে (সোমবার) চট্টগ্রামের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ ভিকটিমের মা শাহীন আক্তার (৪১) বাদি হয়ে (ফৌজদারি অভিযোগ) সিআর মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদির আইনজীবি জাহেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে যার মামলাটি চট্টগ্রাম জেলা শাখার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যার মামলা নং-২৫৬/২৩ ইং।

মামলার আসামিরা হলেন-আনোয়ারা রুদুরা বাংলা বাজার গ্রামের মো. নবীর ছেলে মো. নজরুল (৪০), চাতরী গ্রামের তারেক আজিজ (২৮), মোহাম্মদপুর গ্রামের ফখরুল ইসলাম (২৭), মাহাতা গ্রামের আবু আহসান প্রকাশ বাবুল রাজ (২৬) এবং ডুমুরিয়া গ্রামের রবিউল এহসান (২০)।

আদালতে দেওয়া এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ভিকটিম মনসুর আনোয়ারা জয়কালী বাজারের এটিএম বুথের সামনে আসলে আসামিরা ঘিরে ফেলে। তখন আসামিরা ভিকটিমকে বলতে থাকে “তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস, তোকে অনেকবার বেঁচে থাকার জন্য সুযোগ দিয়েছি; আর সুযোগ নয়” বলে আসামিরা ভিকটিমকে ধরে আনোয়ারা কলেজ মাঠে নিয়ে যান। তখন ভিকটিমকে মামলার প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম ধারালো কিরিচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মারে ও ২ নম্বর আসামি তারেক আজিজ ও ৩ নম্বর আসামি ফারুকুল ইসলাম লোহার রড দিয়ে বামহাতের বাহু থেকে কনুই পর্যন্ত আঘাত করতে থাকে এবং ৪ নম্বর আসামি লোহার রড দিয়ে দু পায়ে আঘাত করতে থাকেন। বাম পায়ের কোমর হতে হাঁটু আঘাত থাকলে ভিকটিম এক পর্যায়ে মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে ভিকটিমের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের আত্মচিৎকারে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে ভিকটিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ভিকটিম চমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাদি শাহীন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কি কারণে নজরুল ও তার দলবল আমার ছেলেকে মারছে আমি জানি না। নজরুলের বাড়ি আমাদের একই এলাকায়। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে আমাকে বলতে পারত আমি বিচার করতাম কিন্তু এই ভাবে কিরিচ, লোহার রড দিয়ে আমার ছেলেকে কেন মারছে আমার জানা নেই। আমার ছেলেকে ১৭ তারিখ থেকে এখন পযর্ন্ত এক ফোঁটা পানিও দেয়নি ডাক্তাররা। আমার ছেলে বাচঁবে কিনা তাও বলতে পারতেছি না।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মূলত বেশি কিছু দিন আগে আনোয়ারা উপজেলা আ.লীগ একই উপজেলার ছাত্রলীগ নিয়ে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। যা সংগঠন বিরোধী বলে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। কারণ ছাত্রলীগকে নিয়ে উপজেলা আ.লীগ কোন ইস্যুতে এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন না। যা নিয়ে আনোয়ারা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক মন্তব্য না করলেও একাধিকসূত্র বলেছেন, কেউ একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ না হলেও গোপনে অদৃশ্য থেকে উসকানি দিচ্ছেন। ফলে, আনোয়ারায় যেকোন সময় বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও ঘটনা হতে পারে এমন আশঙ্কা স্বয়ং সাধারণ মানুষের।’