কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার ড: খলিলুর রহমানের

ত্রিনিদাদ ও টোবাগো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির নিকট পরিচয়পত্র পেশ

কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার ড: খলিলুর রহমান পোর্ট অব স্পেনে ৮ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মিসেস পলা মে উইকস, ও.আর.টি.টি., সমীপে সে দেশে বাংলাদেশের অনাবাসিক হাইকমিশনার হিসেবে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেন।

একই দিনে পরিচয়পত্র প্রদানের প্রাক্কালে হাইকমিশনার সেদেশের পররাষ্ট্র এবং কারিকম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড: আমেরি ব্রাউনের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন এবং পরিচয় পত্রের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এছাড়া তিনি একই মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিবের সাথেও দেখা করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বস্ত্রীক সেদেশের রাষ্ট্রাচার প্রধানের সাথে সুসজ্জিত অশ্বরোহী নিরাপত্তা বাহিনী পরিবেষ্টিত বিশেষ মটর শোভাযাত্রাসহ পররাষ্ট্র ও কারিকম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পৌঁছান। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রটোকল অফিসার তাদেরকে সুস্বাগত জানান এবং নির্দিষ্ট অভ্যর্থনা কক্ষে পৌঁছতে সাহায্য করেন। পরে, তিনি মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে যথানিয়মে তাঁর পরিচয় পত্র প্রদান করেন। সর্বশেষে, হাইকমিশনারকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

পরিচয়পত্র প্রদান প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তিতে মান্যবর হাইকমিশনার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রপতির সাথে এক দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হন। নিয়মিত শুভেচ্ছা বিনিময়ের শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০০৯ সালে কমনওয়েলথ সম্মেলন উপলক্ষে সেদেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি সফরের স্মৃতিচারন করে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রসংশা করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তাঁর সময়কালে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব চলমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

তিনি আলোচনাকালে দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যেকার নিয়মিত পরামর্শ (Foreign Office Consultation) বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মরক (এমওইউ) স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পররাষ্ট্র ও কারিকম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পোর্ট অব স্পেনে তাঁর পরবর্তী সফরের সময় অথবা ভার্চুয়ালি এ স্মারকটি চূড়ান্ত হতে পারে। মান্যবর হাইকমিশনার বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।

মান্যবর হাইকমিশনার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অদূর ভবিষ্যতে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং জানান যে অদূর ভবিষ্যতে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে এ সফরের আয়োজন করা যেতে পারে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে আরো উল্লেখ করেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতার সাথে দেখা করতে পারলে তিনি খুব খুশি হবেন। মান্যবর হাইকমিশনার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মহামান্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।

পরিচয়পত্র প্রদান শেষে মান্যবর হাইকমিশনার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী, এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি সিনেটর মান্যবর পাওলা গোপী-স্কন এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য শক্তিশালীকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন। মাননীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী বাংলাদেশ হতে বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব পণ্য ও ঔষধ পণ্য আমদানীর বিষয় উল্লেখ করেন। দু’দেশ একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের ওপর সম্মত হন। তিনি বাংলাদেশ হতে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এর খসড়ার জন্য অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) তৈরি করছে যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে।

মান্যবর হাইকমিশনার তাছাড়াও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর কিছু আমদানীকারকের সাথে বিশেষ করে যারা বাংলাদেশ হতে আরএমজি এবং চামড়া ও ঔষধজাতক পণ্য আমদানী করছে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা বাংলাদেশ থেকে আমদানী করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং কিভাবে তা সহজ করা যায় মান্যবর হাইকমিশনারকে তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন। আমদানীকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয় বিদ্যমান সমস্যা দূর হলে বর্তমানের ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানী থেকে পরবর্তী দুই বছরে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে পারে। আলোচনার ভিত্তিতে মান্যবর হাইকমিশনার ইতিমধ্যে এপেক্সসহ কিছু সুনামধন্য আরএমজি কারখানা ও চামড়া শিল্পের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং চামড়া ও ঔষধশিল্প সংগঠনের সভাপতির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পুস্তিকা ও বাংলাদেশি পণ্যের কিছু ভিডিও পেয়েছেন। তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশ থেকে আমদানী করা পণ্যসমূহ পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও কারিকম এ ব্যবহার করা যেতে পারে।

মান্যবর হাইকমিশনার ত্রিনিদাদ ও টোবাগো বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষ করে রাজধানী পোর্ট অব স্পেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে মিলিত হন এবং তাদের কথা শোনেন এবং কিভাবে তাদের কন্স্যুলার সেবা সহজভাবে প্রদান করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেন।