দিনাজপুরে ব্যাংঙের ছাতার মতো অবৈধ ক্লিনিক, যত টেষ্ট তত পার্সেনটেজ !

সিভিল সার্জন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ম তোয়াক্কা না করেই দিনাজপুর জেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার সেবার মান ও পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না কেন তাই জনমনে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন।

দিনাজপুরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে চিকিৎসার নামে প্রতারণা বাণিজ্য বর্তমানে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। দিনাজপুর জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি ক্লিনিক ছাড়া নব্বইশতাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে বৈধ কাগজপত্রই নেই। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শর্তাবলী অনুযায়ী না আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স, অপারেশন থিয়েটার ও ঔষধপত্র। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রতারণার যেমন শিকার হচ্ছে তেমনি প্রয়োজন নেই এমন রোগীকেও অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার কারনে করতে হচ্ছে মৃত্যু বরণ।

ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে একটিতেও নেই কোন চিকিৎসাবর্জ্য ধ্বংসের ব্যবস্থা,নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র। যেকোনো বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনেষ্টিক নিবন্ধনভুক্ত হতে বা যাত্রা শুরু করতে হলে পরিবেশ ছাড়পত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে বর্জ্য নষ্ট ও শোধন ব্যবস্থাপনা না থাকলে এমন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয় না, তা সত্তেও দিব্বি চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। আর যত্রতত্র এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়ছে।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, জেলায় মোট নিবন্ধিত ক্লিনিক রয়েছে ৬৪টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৩০ টি ও ব্লাড ব্যাংক ২ টি। এর বাইরে যেসব অনিবন্ধিত যেসব ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান
অব্যাহত আছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য।
তিনি আরো জানান সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যেকোনো সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ৯০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার করতে পারবে, এর ভিতরে করার কোন সুযোগ নেই।

এদিকে যেকোনো সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে ৯০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নিয়ম থাকলেও এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর সন্নিকটেই জাতীয় গৃহায়ান কর্তৃপক্ষের আবাসিক প্লট গুলোতে গড়ে উঠেছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে হলে নিতে হবে গৃহায়ান কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র , তবে এসব তোয়াক্কা না করেই গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে মাশোয়ারা দিয়েই চলছে এসব বাণিজ্য।

বাংলাদেশ প্রাইভেট প্রাকটিস এন্ড মেডিকেল এ্যাক্ট ১৯৯২ অনুযায়ী ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও নির্ধারিত স্থান সম্মিলিত এবং নির্দিষ্ট জীবানু মুক্ত কক্ষ বিশিষ্ট ভবন অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদি প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ছাড়াও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ডাক্তার, আবাসিক ডাক্তার, সার্জন, স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা) থাকতে হবে যেমন ঃপ্রতি দশ (১০)বেডের জন্য চার জন ডাক্তার এক (১) জন করে তিন (৩) শিপ্টে সার্বক্ষনি উপস্থিত ও রিজাভে থাকবে আবার একই প্রতি দশ (১০) বেডের জন্য ছয় (৬) জন স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা) তিন শিপ্টের জন্য দুই (২) জন করে সার্বক্ষনিক ডিউটি পালন করবেন। কেবল এসব শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে বেসরকারীভাবে কোন ক্লিনিক রেজিস্ট্রেশন দেয়ার কথা, অথচ এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিতিমালা অনুযায়ী কোন নজরদারী নেই ।

বলে ঠাকুরগাঁ জেলার রোহিয়া থেকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উম্মে কুলসুম এর অভিভাবক জানান, কখনো কখনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের অপচিকিৎসায় রোগীরা অবনতি আবার কখনো মৃত্যবরণ করলেও আইনানুক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।

কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম বলেন, দিনাজপুরে আবাসিক এলকা সহ বিভিন্ন জায়াগায় পরিবেশ অধিদপ্তর এর অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে এ আশা ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে রোগীদের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ নজরদারি করলে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে বলে আশাবাদী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডাক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গুটিকয়েক ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সৎ ইচ্ছার অভাবের কারণে গোটা চিকিৎসা সমাজের ভাবমূর্তি আজ প্রশ্নবৃদ্ধ হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে দ্রুত আইনি পদক্ষে গ্রহন করে দেশের চিকিৎসা সেক্টরে পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদি সাধারণ মানুষ।