দুই মহিষের সেবা করতে গিয়ে চরম বিপাকে থানার ওসি

একেই বোধহয় বলে বিপত্তি! তাও যে সে নয়। বিপাকে পড়লেন খোদ থানার ওসি। পাচারকারীদের ফেলে রাখা অবলা জীব রক্ষা করতে গিয়ে সে কী কাণ্ড! গ্যাঁটের কড়ি তো খসলই, উপরন্তু কোর্ট-কাছারি, কাস্টমসের চক্করে হয়রান হতে হল তাকে।

এমনিতেই চোর, খুনি, আসামী, পাচারকারী ধরতে ক্লান্ত ওসি’র দু’দণ্ড জিরনোর ফুরসত নেই। তার উপর আচমকা দুই অতিথির আগমনে ঘুম উধাও। অতিথিও ইয়া বড়, কুচকুচে কালো। আড়ে বহরে বেশ অনেকটাই জায়গা দখল করে থাকে তারা।

তারা হল দুটি মহিষ। গত আটদিন ধরে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হোগলবেড়িয়া থানার ওসি কমটন রায় কাজের ফাঁকে থানা চত্বরে সহায়তা কেন্দ্রের পাশে আচ্ছাদনের নিচে আশ্রয় নেওয়া দুই অতিথির খেয়াল রাখছেন।

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় কাঁটাতার-বিহীন এলাকার অনেকটাই জুড়ে রয়েছে হোগলবেড়িয়া। পা বাড়ালেই বাংলাদেশ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি কমটন রায় সদা ব্যস্ত। দু’জন স্টাফও সম্প্রতি নেই। এ অবস্থায় কমটনবাবু যেখানেই থাকুন, নবাগত দুই মহিষের জন্য আদর যত্নে কোনও খামতি রাখেননি।

প্রয়োজনে থানার স্টাফদের ফোনেও নির্দেশ দেন। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে ওসি’র অস্বস্তি অনেকটাই কেটেছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, মহিষ দু’টিকে যেন কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ মে। হোগলবেড়িয়ায় থানার গোপালপুর ঘাটের কাছে রুটিন মাফিক পুলিশের গাড়ি যায়। ওই সময় রাস্তার ওপর দুই মহিষর ডাক শুনে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। পাশেই পদ্মানদী। কাঁটাতার-বিহীন এলাকা। পাচারের স্বর্গরাজ্য।

তবে পুলিশ অফিসার পদক্ষেপ নিয়ে দেরি করেননি। মহিষ দু’টোকে থানায় নিয়ে আসেন। উদ্ধার হওয়া মহিষ নিয়ে সরকারি লেখাপড়া হয়। তারপর থেকে ঘাস, খড় খাওয়ানো, বিকালে মাঠে নিয়ে যাওয়া সবই করা হচ্ছে নিয়ম মাফিক। এ সবই থানার স্টাফরা সামলাচ্ছিলেন। মোষ দুটিকে দেখতে থানায় হাজির হন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও।

শেষমেশ ওসি কমটন রায় তেহট্ট মহকুমা শাসকের আদালতে এই নিয়ে আবেদন করেন। তেহট্টর মহকুমা শাসক সুধীর বলেন, ‘দিন পাঁচেক আগে ওসি আবেদন করেন। থানায় মহিষ দুটিকে দেখভাল করার মতো পরিকাঠামো নেই। মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছি মোষ দুটিকে কাস্টমসের হাতে তুলে দিতে।’

কাস্টমস সূত্রেও বুধবার জানানো হয়েছে, নিয়মানুযায়ী মহিষ দুটিকে নিয়ে আসা হবে। নিলাম ডাকা হবে। ঘটনা প্রসঙ্গে কমটন রায় বলেন, যতই ব্যস্ততা থাক অবলা জীবকে একটু তো সেবা করতে মন্দ লাগে না।