দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বকে শেখাতে পারে বাংলাদেশ: বান কি-মুন

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন।

মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের (গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশান-জিসিএ) এই চেয়ারপার্সন বলেন, “আমরা এখানে বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিতে চাই।

“অভিযোজনের ক্ষেত্রে আমাদের সেরা শিক্ষক হচ্ছে তারাই, যাদের অবস্থান জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সম্মুখসারিতে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই আছে, যারা আমাদের শেখাতে পারে।“

ঢাকায় জিসিএ-র আঞ্চলিক কার্যালয় করার পেছনে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে এ বক্তব্য দেন বান কি মুন; এর আগে আরেকটি ভার্চুয়াল আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কার্যালয়টি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।

ঘুর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করে বান কি-মুন বলেন, ”সারা পৃথিবী যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করছে, তখন বাংলাদেশ দুর্যোগের মোকাবেলায় শক্ত হাতে দাঁড়িয়েছে।”

সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আসা ঘুর্ণিঝড় আম্পানের সময় মানুষজনকে বিপুল সংখ্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার প্রসঙ্গও বক্তব্যে টানেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে জিসিএ চেয়ারপার্সন বলেন, আইপিসিসির তথ্য অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠ ১ মিটার উঁচু হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৭ ভাগ পানির নিচে চলে যাবে। জাতিসংঘের আরেকটি রিপোর্ট বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ঢাকা শহর ডুবে যেতে পারে।

বান কি-মুন বলেন, অভিযোজনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে ও তা মোকাবেলার পদ্ধতি জানা এবং মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

”আর এক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতা ও সৌহার্দ্য বাড়ানোর পাশাপাশি আবশ্যিকভাবে অর্থেরও প্রয়োজন হয়। অভিযোজনের কাজকে ত্বরান্বিত করতে আমরা এই সেন্টার করেছি।”

দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনের ক্ষেত্রে নতুন চালু করা কার্যালয় সমন্বয়ের কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পার্টনারদেরকে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সকল অংশীজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মুন বলেন, “যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকে যেন সহযোগিতা করতে পারি, তারা যাতে অভিযোজন করতে, বেঁচে থাকতে এবং এগিয়ে যেতে পারে।“

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “বৈশ্বিক ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনকে দুয়েকটা দেশের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। অন্য আরেকটা পৃথিবী যাতে আমরা পাব না, সেক্ষেত্রে এটা ছাড়া ভিন্ন চিন্তা করারও সুযোগ নেই।

“জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু দেশ এগিয়ে আসছে না। আমরা চাই তারাও এগিয়ে আসুক।”

মোমেন বলেন, “আমরা এই আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা আশা করি আমাদের উন্নয়ন সহযোগী এবং সব দেশ তাদের সব ধরনের রিসোর্চ, অভিজ্ঞতা ও বিশেষ জ্ঞান এগিয়ে আসবে।”

দুর্যোগ মোকাবেলায়, অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা, তা সবার সঙ্গে ভাগাভাগির সুযোগ এর মাধ্যমে তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, জিসিএ-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভার্কুইজেন বক্তব্য দেন।