দূরপাল্লার বাস বন্ধ, সীমাহীন দুর্ভোগ ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট ডেকেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ধর্মঘটে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। এতে করে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এ অবস্থায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে করে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ।

শনিবার (৬ নভেম্বর) গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা ও ঢাকায় বসবাস করা মানুষজন জরুরি প্রয়োজনে গাবতলী থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ বিকল্প মাধ্যমে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার চড়া ভাড়ার কারণে দীর্ঘসময় ধরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকার বাইরে যাওয়া মানুষরা।

গত বৃহস্পতিবার সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ফরিদপুর থেকে সাত মাসের সন্তান নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আমিনা বেগম। আজ বাড়ি ফিরে যেতে গাবতলীতে আসেন তিনি। এক হাতে ব্যাগ ও অন্য হাতে ছোট শিশুকে জড়িয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আমেনা বেগম বলেন, সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে ছোট শিশুকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। বাড়ি ফিরতে সকাল ৭টায় গাবতলীতে এসে দেখি দূরপাল্লার বাস বন্ধ। কোলের শিশু আর ব্যাগ নিয়ে দীর্ঘসময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে যাবো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে যে ভাড়ি দাবি করছে তা দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে অপেক্ষা করছি। কিন্তু যে কোননো উপায়ে বাড়ি ফিরতে হবে বলেও জানান তিনি।

একটি বড় মাইক্রোবাসে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য যাত্রী ডাকছিলেন মিজানুর রহমান। মাথাপিছু এক হাজার টাকা ভাড়া দাবি করেন তিনি। ভিড় করে অনেককে তার মাইক্রোবাসে উঠতে দেখা গেছে।

চালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে জানান, ১৩ জন নিয়ে ঝিনাইদহ যাবেন। প্রত্যেকের কাছে এক হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করবেন। বিকেলের মধ্যে যদি ঝিনাইদহ পৌঁছতে পারলে রাতে মধ্যে যাত্রী নিয়ে আবার ঢাকায় পৌঁছবেন।

ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রোহান। চারজন সহকর্মী মিলে বরগুনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাবতলীতে আসেন। তবে বাস না পেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।

তাদের সঙ্গে কথা হলে জানান, বাড়ি যেতে সকাল সকাল গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন বাস বন্ধ। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি দাবি করছেন। বাড়ি যাওয়াও জরুরি। এ কারণে উপায় খুঁজছেন তারা।

গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রাইভেটকারে খুলনায় পাঁচজন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন চালক হাবিবুর রহমান। প্রাইভেটকারে মাথাপিছু দেড় হাজার টাকা করে ভাড়া চুক্তি করা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি নিয়মিত উবার ও পাঠাওয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করেন। বাস বন্ধ থাকায় পাঁচ যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। ফেরার পথে আবারও যাত্রী নিয়ে রাতের মধ্যে ঢাকায় ফিরবেন বলে জানান।

হাবিবুর রহমান নামের এক মোটরসাইকেল চালক ফরিদপুর যাত্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বলেন, নিয়মিত আমি পাঠাওয়ের রাইড শেয়ার করি। বাস বন্ধ, তাই গাবতলীতে এলাম। যাত্রী পেলে ফরিদপুর নিয়ে যাবেন বলে জানান তিনির।

এদিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে। কোনো কোনো কাউন্টার খোলা থাকলেও সেখানে টিকিট বিক্রেতাদের অলস সময় পার করতে দেখা যায়।

হানিফ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মজিবুর বলেন, গতকাল সকাল থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কাউন্টার বন্ধ থাকবে।

পাশেই সোহাগ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা ফয়সাল বলেন, প্রতিদিন সকাল সোয়া ৭টা থেকে আমাদের বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। তবে শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে। আজ বিকেলে মালিক সমিতির বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।