দেশের ২৩ হাজার ৩৮০ পর্যবেক্ষক থাকতে চায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায় দেশের ২৩ হাজার ৩৮০ জন পর্যবেক্ষক। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এই সংখ্যা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ২ হাজার ও স্থানীয়ভাবে ২১ হাজার ৩৮০ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে সংস্থাগুলো জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ১০ ডিসেম্বর। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৮১টির ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার ৩৮ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস বা হাইকমিশন ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ঐ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

ইসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে ১৫৬ জন পর্যবেক্ষক ও ৭১ জন সাংবাদিক আবেদন করেছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন চারটি সংস্থা ও ৩৪টি দেশের নির্বাচন কমিশনের ১১৪ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এদের বিমান-ভাড়া ছাড়া সব স্থানীয় ব্যয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বহন করবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে এই চার জন বিশেষজ্ঞ তাদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটও ভোট পর্যবেক্ষণ করতে চায়। থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডাচ, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্জিয়া, উগান্ডা, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, কঙ্গো থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের আবেদন এসেছে। এছাড়া এএফপি, এনডিটিভি, নিউ ইয়র্ক, টাইমস, রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটস প্রেস ইন্ডিয়া, জিজি প্রেস-জাপান, সুইডিশ রেডিও, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দি ন্যাশনাল, জাপানের দি ইয়োমিউরি শিমবুন, জাঙ্গ ফেইহেইট—এসব সংবাদমাধ্যম থেকে সাংবাদিকরা নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে আসতে চান। এক জন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও আবেদন করেছেন।

আর নির্বাচন কমিশন থেকে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মিশর, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল, থাইল্যান্ড, আজারবাইজান, মালয়েশিয়া, মরিশাস, তিউনিশিয়া, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত, সৌদি আরব, চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুরের নির্বাচন কমিশনকে ভোট দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সার্ক ও ওআইসি মহাসচিব, ফেম্বোসা ও এ-ওয়েব চেয়ারপারসনকেও।

গত সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সাংবাদিকদের জানান, তাদের দেশ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তিন জন পর্যবেক্ষক আসবেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের ১৩ কর্মকর্তা ।

নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেশি সংখ্যক দেশীয় পর্যবক্ষেক রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রথমে ৬৭টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল। কিন্তু অনেক সংস্থার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া সংখ্যাটিও ছিল অনেক কম। এ অবস্থায় দেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় দেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে আরও বেশি সংস্থাকে নিবন্ধন দিতে দ্বিতীয় বারের আবেদন আহ্বান করে। দ্বিতীয় বার নিবন্ধন দেওয়া হয় আরও ২৯টি সংস্থাকে। এই ২৯টি সংস্থার বেশির ভাগই প্রথম বার যোগ্য বিবেচিত হয়নি।

সংস্থাগুলোর তহবিল সংকট :এদিকে ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো তাদের পর্যবেক্ষকদের তালিকা দিলেও শেষ পর্যন্ত কতজনকে মাঠে রাখতে পারবে তা বলা যাচ্ছে না। এবার নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর বেশির ভাগই নতুন। কয়েকটি সংস্থার প্রধানরা নির্বাচন ভবনে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পর্যবেক্ষণের ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না জানতে চেয়েছেন।

ভোট পর্যবেক্ষণ করবে ৩০৫ সদস্যের মনিটরিং সেল :নির্বাচনে ৩০৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল ভোট পর্যবেক্ষণ করবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন ভবনে থাকবে ১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় টিম। আর আট বিভাগের চার সাব সেল ও ৬৬ রিটার্নিং কর্মকর্তারা কার্যালয়ে বাকিরা দায়িত্ব পালন করবেন। ইসি সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আগামী ১ জানুয়ারি থেকে টিমের সদস্যরা প্রাথমিক কাজ শুরু করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে চার জন করে ২৬৪ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া আট বিভাগের চারটি সাব সেলে থাকবেন ৩০ সদস্য। তারা নির্বাচনের যে কোনো পরিস্থিতি প্রতিবেদন একটি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে নির্বাচন ভবনে পাঠাবেন। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল।