দেড় মাসে সাড়ে তিন হাজার স্থাপনা গেছে পদ্মার পেটে
প্রতিবছরই শরীয়তপুরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পদ্মা। কিন্তু এ বছর এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি। বিশাল বিশাল স্থাপনা মুহূর্তেই যেন গিলে খাচ্ছে সর্বনাশা পদ্মা। নিঃস্ব মানুষের আহাজারিতে এখন ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মার পাড়। গত দেড় মাসে নড়িয়ায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে জানা যায়, গত দেড় মাসের ব্যবধানে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের কেদারপুর, দক্ষিণ কেদারপুর, চর নড়িয়া, চর জুজিরা, পাঁচগাঁও, চন্ডিপুর গ্রাম, মোক্তারের চর ইউনিয়নের ইশ্বরকাঠি, শেরআলী মাদবরের কান্দি গ্রাম ও নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখী পাড়া, বাঁশতলা ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির নদীর পেটে চলে গেছে।
এদের মধ্যে গাজী কালুর মেহমান খানা চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি, তারা মিয়ার তিনতলা বাড়ি, হাফিজ কমিশনারের তিনতলা বাড়ি, নুর হোসেন দেওয়ানের তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়।
নদীগর্ভে চলে গেছে মমিন আলী বেপারীর দুইটি দোতলা ও একটি একতলা বাড়ি, জানে আলমের দোতলা বাড়ি, খোরশেদ বেপারীর দোতলা বাড়ি, মোহাম্মদ দিলু খার দোতলা পাকা বাড়ি, পলাশ বেপারীর দোতলা বাড়ি, জব্বার খানের দোতলা বাড়ি, আজাহার খানের দোতলা বাড়ি, জাহাঙ্গীর দেওয়ানের দোতলা বাড়ি, কুদ্দুস ঢালীর দোতলা বাড়ি, বেপারী মঞ্জিল নামে দোতলা বাড়ি, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের দোতলা বিলাসবহুল বাড়িটিও।
শুধু তাই নয় হারুন খান বাড়ি, বাদল বেপারী, লতিফ হাওলাদার, হান্নান ঢালী, শাহ আলম দেওয়ান, আবুল বাশার দেওয়ান ও সিরাজ খানের একতলা বিলাসবহুল বাড়িসহ নুর হোসেন দেওয়ানের তিনতলা দেওয়ান ক্লিনিক, দোতলা দেওয়ান মার্কেট, ইমাম হোসেন দেওয়ানের দোতলা হাসান ট্রেডার্স, সবুজের লাইফ কেয়ার হাসপাতাল নামে তিনতলা ভবন, জব্বার খানের খান মার্কেট নামে একতলা ভবন, দেওয়ান রওশনারা প্লাজা নামে তিনতলা মার্কেট, কাজল বেপারীর বেপারী সুপার মার্কেট নামে দোতলা ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে কেদারপুর গ্রামের অর্ধশত বছরের পুরনো রাম ঠাকুর সেবা মন্দির নদীগর্ভে চলে যায়। নদীগর্ভে চলে গেছে পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শের আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একতলা বিশিষ্ট খান পাড়া জামে মসজিদ, ঢালীপাড়া জামে মসজিদ, পূর্ব নড়িয়া জামে মসজিদ ও দোতলা বিশিষ্ট হযরত বেলাল (রাঃ) জামে মসজিদের এক তৃতীয়াংশ।
পদ্মার ভাঙনে প্রতিদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের শেষ সম্বল বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি। তীব্র ভাঙনে নড়িয়ার নদী তীরবর্তী মানুষ এখন দিশেহারা ও পাগলপ্রায়। সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষের চোখের পানি যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে সর্বনাশা পদ্মার সঙ্গে।
কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙনে আমাদের দেওয়ান বংশের প্রায় ২৫ একর সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। সর্বশেষ এ বছর কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি ও মূলফতগঞ্জ বাজারের দুটি বহুতল ভবনসহ ৪০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বনাশা পদ্মা আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। এখন পথে বসার যোগাড়।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মার নদীর গর্ভে চলে গেছে সাধুর বাজার, ওয়াপদা বাজার ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের অর্ধেক। ঝুঁকিতে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার পরিবার। তাদের চাল ও শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাড়ে তিনশ পরিবারকে ৭শ বান্ডিল টিন ও নগদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন