ধর্ষণের ৪৮ মিনিটের দৃশ্য ধারণ করা হয় বিল্লালের মোবাইলে

বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে সেই রাতে সাফাত ও নাঈম একই রুমে দুই তরুণীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছিল, আর সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিল ড্রাইভার বিল্লাল। টানা ৪৮ মিনিট মোবাইল ক্যামেরায় নির্যাতনের সেই দৃশ্য ধারণ করে বিল্লাল।

ওই ভিডিও মুছে ফেলার কথা বিল্লাল রিমান্ডে জানালেও একটি সূত্র বলেছে, তার আগেই নাঈম আশরাফ ও সাফাত তাদের মোবাইলে ওই ভিডিও নিয়ে নেয়। তবে পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, ভিডিওটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে বিদেশি মদ পান করিয়ে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে সাফাত ও সাকিফ। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবীব ১৬৪ ধারায় সাফাতের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন। আর সাকিফের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হোটেলটির ৭০২ নম্বর স্যুটের (বিলাসবহুল কক্ষ) বেডরুমে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত এক তরুণীকে এবং ড্রয়িংরুমে নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম) অপর তরুণীকে ধর্ষণ করে।

ঘটনার সময় ওই স্যুটেই অবস্থান করছিলেন তাদের অপর বন্ধু ও মামলার আসামি সাদমান শফিক। তবে তিনি ধর্ষণ করেননি। ধর্ষণের পর সাফাতের নির্দেশে তিনি (সাদমান শফিক) ওই দুই তরুণীকে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ান।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার অপর আসামি ধর্ষক নাঈমের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম এসএম মাসুদ জামান।

জবানবন্দিতে সাফাত ও সাদমান একই ধরনের তথ্য দিয়ে জবানবন্দিতে বলেন, ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ওই দুই তরুণীকে ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে নিয়ে আসা হয়।

উপর্যুপরি মদ খাওয়ানোর পর ওই দুই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন তারা। তবে ওই তরুণীদের আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয়নি এবং ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়নি বলেও জানান তারা।

জবানবন্দিতে সাফাত জানান, ধর্ষণের ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে বন্ধু সাদমানের মাধ্যমে রাজধানীর একটি হোটেলে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে আসামিদের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথোপকথন হতো তাদের।

ঘটনার দিন অনুষ্ঠানে ওই দুই তরুণীকে আসতে আমন্ত্রণও জানান সাদমান। এরপর দ্য রেইনট্রি হোটেলের সেই বিলাসবহুল রুমে তিনি (সাফাত) ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে নিয়ে যান।

কিছুক্ষণ পর একসঙ্গে পাঁচজন (দুই তরুণী, সাফাত, নাঈম ও সাদমান) মদ পান করেন। তরুণীদের জোর করে মদ খাওয়ানো হয়। এতে তরুণীরা বেসামাল হয়ে পড়লে তাদের একজনকে বেডরুমে ও অপরজনকে ড্রয়িংরুমে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। সেখানে উপস্থিত ধর্ষণ মামলার অপর আসামি সাদমান তা উপভোগ করেন।

ছয় দিনের রিমান্ডের এক দিন বাকি থাকতে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতকে এবং পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে রেগনাম গ্রুপ ও পিকাসো রেস্তোরাঁ ভবনের মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাকিফ এই জবানবন্দি দেন। পৃথক দুই হাকিম তাদের খাসকামরায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, আসামি সাফাত ও তার বন্ধু সাফিককে ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে আসামি সাফাতকে ছয় দিন এবং সাফিককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমাতি দেন আদালত। রিমান্ডে থাকাকালে আসামিরা ঘটনার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।