নওগাঁর বদলগাছীতে বালু ও মাটি উত্তোলনে বাঁধা দেওয়াই চাঁদাবাজির মামলা, এলাকাবাসীর মানববন্ধন
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়া নামক মৌজায় ছোট যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালু ইজারাদারের ব্যক্তিরা। এতে করে গভীর গর্ত হয়ে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও মাটি তুলে নদী রক্ষাকারী বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা, চলাচলের রাস্তা নষ্ট করা ও ছোট-ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থিদের দূঘটনা ঘটার অশংখার প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসী ও ইজারাদার পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে বালু ও মাটি উত্তোলনে বাধা, চাঁদা দাবি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে বদলগাছী থানায় একটি মামলা করেছেন বালু মহালের ইজারাদার তপন কুমার মণ্ডল। বদলগাছী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনিছুর রহমানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এ মামলা করেন। গতকাল রাতেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বাবুল আক্তার (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বদলগাছী উপজেলা সদরের উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর বালু মাহাল চলতি সনে ইজারা নেয় সেনপাড়া গ্রামের তপন কুমার মন্ডল ও তার লোকজন। কিন্তু বালু মহাল ইজারা নিলে ও নদীতে তেমন কোন স্থানে পর্যাপ্ত বালু না থাকায় ইজারাদারেরা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নদী সাইট থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অবাদে বিক্রি করছে। গত ১ মাস ধরে বালু মহাল ইজারাদার কর্তৃক সদর ইউপির তেজাপাড়া মৌজার ছোট যমুনা নদী গর্ভে থেকে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করছিল।
আর এই বালু ও মাটি পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর ও ট্রাক। অতিরিক্ত বালু ও মাটি বোঝাই ট্রাক গুলোর বেপরায়া চলা চলে তেজাপাড়া যমুনা নদীর বিশ্ব বাঁধ হয়ে গ্রামীণ মাটি, পাকারাস্তা ও কোমারপুর পাকা রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোর রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবাদে চলাচল বালু ও মটিবাহী ট্রাক্টর। পরিবহনের যানজটে এলাকার মানুষ, স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাপক সম্যায় পড়ছে। তেমনি ভাবে অতিরিক্ত লোড বোঝাই ট্রাক্টর ও ট্রাক চলাচলের কারনে গ্রামীণ সরু পাকা রাস্তা গুলি ধংশের মুখে পড়েছে।
গ্রামীণ রাস্তা গুলি রক্ষা সহ এলাকার ছোট ছোট শিক্ষার্থিদের নিরাপদ চলাচলের জন্য গত সোমবার তেজাপাড়া,কোমারপুর ও জিধিরপুর তিন গ্রামের নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বালু ও মাটি বোঝাই ট্রাক্টর গুলি অটকিয়ে প্রতিবাদ জানালে সেখানে ইজারাদারের লোকজন গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এবং আটককৃত গাড়িগুলি ছেড়েদেন। এবং মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তেজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল মাঠে ইজারাদারের লোকজন ও গ্রামবাসীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
গত মঙ্গলবার দুপুরে বদলগাছী উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় বদলগাছী সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ‘ছোট যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও পরিবহনের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বদলগাছী বালু মহালে তেজাপাড়া মৌজায় বালু উত্তোলনের কোনো পয়েন্ট উল্লেখ না থাকলেও ইজারাদারের লোকজন গত এক মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নামে এসকেভেটর মেশিন দিয়ে ও মাটি কেটে বিক্রি করছেন।
প্রতিদিন এই রাস্তাদিয়ে প্রায় ১২ শত থেকে ১৫ শ গাড়ী বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এতে করে এলাকার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমলমতী শিক্ষার্থি, এলাকার ছোট ছোট কচিকাচা বাচ্চাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ও রাস্তার নষ্ট হওয়ার প্রতিবাদ করায় বালু ইজারাদার এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তেজাপাড়া মৌজা থেকে অতীতে কখনো বালু উত্তোলন কিংবা নদী চরের মাটি তোলা হয়নি। অথচ গত এক মাস ধরে ইজারাদারের লোকজন নদীর বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করে তেজাপাড়া গ্রামের পাশে নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি ও বালু তুলে বিক্রি করছে। গভীর গর্ত করে নদী চরের মাটি তোলায় নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রায় ৪০-৫০টি ট্রাকে করে প্রতিদিন অন্তত ২০০ বার গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালু ও মাটি পরিবহন করায় গ্রামীণ রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। এজন্য স্থানীয় লোকজন ওই স্থান থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদ করে আসছে।
ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান বলেন, তেজাপাড়া মৌজা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন ওই স্থান থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। গতকাল সোমবার তেজাপাড়া, জিধিরপুর ও চাংলা গ্রামের কয়েশ মানুষ একত্রিত হয়ে বালু ও মাটি তোলায় বাধা দেন। এটা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি জানার পর আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এলাকাবাসী ও ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসার জন্য আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তেজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এখন শুনতেছি, রাতে নাকি ইজারাদার আমাকে সহ এলাকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছেন। মামলার পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্য।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন