নড়াইলের জমিদার’র কালিদাস ট্যাংক’ পুকুরের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক

নড়াইলের জমিদার’র কালিদাস ট্যাংক পুকুরের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেছেন, পুকুরটির নাম পরিবর্তন করা হয়নি। নাম কালিদাস ট্যাংক আছে, এটাই থাকবে।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকার এ পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ফলকে লেখা ছিল, ‘লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তরের শুভ উদ্বোধন’।

পুকুরটির নামের পরিবর্তন দেখে এলাকার সচেতন নাগরিকেরা এর প্রতিবাদ করেন। উদ্বোধনের পর দীর্ঘদিন পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়নি। সস্প্রতি কাজ শুরু হলে পুকুরটির নাম পরিবর্তন নিয়ে আবারও প্রতিবাদ শুরু হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘পুকুরটি সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয় তখন এর নাম “কালিদাস ট্যাংক” ছিল। কিন্তু একজন বরেণ্য ব্যক্তির নাম না থাকায় প্রকল্পটি পাস হয়নি। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ডাকনাম লাল মিয়া। পরে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে “লাল মিয়া পন্ড অ্যান্ড কালিদাস ট্যাংক বিউটিফিকেশন প্রকল্প” রাখা হয়। প্রকল্পটি পাসের পর তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয়। মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা পুকুরটির বিউটিফিকেশন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে করতে গিয়ে উদ্বোধনী নামফলকে ভুল করে “লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন” লেখা হয়েছে। এতে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নামফলকটি পরিবর্তন করে দিতে বলেছি। ১৫ দিন আগে পুকুরটির খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে পুকুরটির নাম “কালিদাস ট্যাংক” করা হবে।’

নড়াইল পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভার মহিষখোলা মৌজার ৫২৮ নম্বর দাগে পুকুরটির অবস্থান। পুকুরটির আয়তন ২ একর ৫ শতক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরটি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নড়াইল জেলা কমিটির সভাপতি এস এ মতিন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে পুকুরটির নাম “কালিদাস ট‍্যাংক”। সেটা পরিবর্তনের করা যাবে না। এটির নাম “লাল মিয়া পুকুর” করায় আমরা প্রতিবাদ করেছি। কয়েক দিন আগে পৌর মেয়রের সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। এতে ঐকমত্য হয়েছে। পুকুরটি খনন শেষে “কালিদাস ট‍্যাংক” নামই থাকবে।’
পুকুরটির নাম পরিবর্তন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নড়াইল জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এবং নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে আসছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর আবার পুকুরটির নাম “কালিদাস ট‍্যাংক” করা হবে বলে পৌর মেয়র আমাদের জানিয়েছেন। এর ব্যত্যয় হলে আমরা তা মেনে নেব না।’

মলয় কুমার কুণ্ডু আরও বলেন, এলাকার মানুষ আগে চিত্রা নদীর পানি পান করত। সুপেয় পানির জন্য নড়াইলের জমিদার কালিদাস রায়ের দুই ছেলে পুকুরটি খনন করেন। কালিদাস রায়ের নামে পুকুরটির নাম রাখা হয় ‘কালিদাস ট‍্যাংক’।