নড়াইলের বিভিন্ন বিলে ডিজিটাল ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার

নড়াইলের বিভিন্ন বিলে ডিজিটাল ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার চলছে।
কামাল প্রতাপ গ্রামের এস এম ফখরুল আলম জানান, শীত মৌসুমের ৩-৪ মাস নড়াইলের ইছামতি বিল, পিরোলী বিল, চাপুলিয়া বিল, নলাবিল, বাবুপুর বিলসহ বড় বড় বিলে নানা পদ্ধতিতে নানা প্রজাতির হাঁসপাখি, সরাল, কালকুচ, কালিম, সারসসহ বিভিন্ন জাতের পরিযায়ী পাখি শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লাহুড়িয়া গ্রামের মিরাজ খান বলেন, শীত মৌসুমে নড়াইলের বড় বড় বিল জলাশয়ের অভায়াশ্রম ঘিরে বরাবর অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। সেই সঙ্গে শুরু হয় পাখি শিকারিদের ঘৃণ্য তৎপরতা। এসব বিলে বিভিন্ন সময় নানা পদ্ধতিতে পাখি শিকার করা হলেও বর্তমানে শিকারিদের কাছে ফাঁদ পেতে পাখির ডাক বাজিয়ে পাখি শিকার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে বিলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে সারিসারি খুঁটি গেড়ে তাতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চক্রাকারে নাইলনের মজবুত রশির স্থায়ী ফাঁদ তৈরি করে দেওয়া হয়।
পেতে রাখা সেই ফাঁদে পাখিদের আকৃষ্ট করতে নেওয়া হয় অভিনব পদ্ধতি। চতুর শিকারিরা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন পাখির ডাক ডাউনলোড করে ফাঁদের মাঝ বরাবর স্থাপন করা মাচানে সাউন্ডবক্স বসিয়ে পাখির আনাগোনা বুঝে সেই গোত্রীয় পাখির ডাক চালিয়ে দেয়। সহজাত প্রবৃত্তির কারণে স্বগোত্রীয় পাখিরা সেই ডাক লক্ষ করে ছুটে গিয়ে আটকে পড়ে মরণ ফাঁদে।
এভাবে প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে অভিনব কায়দায় পাখি নিধনের কর্মযজ্ঞ।
জানা যায়, রাতে শিকার করা এসব পাখি সূর্যের আলো ফোটার আগেই বিক্রি হচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ক্রেতার কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পেশাদার পাখি শিকারি বলেন, বাজারে অতিথি পাখির চাহিদা খুব বেশি। ধরতে পারলে বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই। অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। ফলে ভোর রাতেই পাখি তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়।
পরিবেশবিদ মির্জাপুর গ্রামের এডভোকেট এস এ মতিন জানান, জেলায় এভাবে নির্বিচারে পাখি নিধনের ফলে ব্যাপকভাবে কমে গেছে পরিযায়ী পাখিদের সমাগম। পাখি শিকার বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই নড়াইলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম অনুসঙ্গ পরিযায়ী পাখি প্রকৃতি থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বগুড়া গ্রামের তুফান জানান, শীত মৌসুমে পাখি শিকারিদের ব্যাপক অপতৎপরতার ফলে বিলখাল-নদীনালা বিধৌত সবুজশ্যামল এ জেলার অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতের অত্যতম অনুসঙ্গ পরিযায়ী পাখির বিভিন্ন অভয়াশ্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এতে উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে পাখি সমাগম।
চাচুড়ী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, পরিযায়ী এসব পাখির উন্মুক্ত প্রান্তরে অবাধ বিচরণের মধ্যদিয়ে প্রকৃতিতে শোভা বর্ধনের কথা থাকলেও শিকারির নিষ্ঠুরতায় এভাবে বস্তাবন্দি হয়ে কেজিদরে বেচা-বিক্রির পরে ভোজন রসিকদের রসনার খোরাক হতে হচ্ছে।বিলমাঠে খাদ্যের সন্ধানে এসে বরণ করতে হচ্ছে নির্মম পরিণতি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, নড়াইল জেলা পাখির নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে ও পাখির স্বাধীন চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ পাখি শিকারের যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শক্ত অবস্থানে আছে। অতিথি পাখি শিকারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।