নরসিংদীতে ৯টি ইউনিয়ন মেঘনার ভাঙনে বিপর্যস্ত

নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে মেঘনার ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বসতবাড়ী হারিয়ে মানুষজন আশয়হীন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, এ বছর সারা দেশে প্রতি বছরের ন্যায় ব্যাপক বন্যা হওয়ায় নদীর পানি বেড়েছে। নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে ভাঙছে চরাঞ্চল। এরই মধ্যে মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়েছে নরসিংদীর করিমপুরের শুঁটকিকান্দা, রায়পুরার চরমধুয়া, চাঁনপুরের কালিকাপুর, শ্রীনগরের ফকিরের চর, পলাশতলীর চর মল্লিকপুর ও মির্জাচরের আনন্দবাজার গ্রাম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো শুঁটকিকান্দা ও চরমধুয়া।

শুঁটকিকান্দায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৪০০ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়ে পরিবারগুলো চিড়া-মুড়ি খেয়ে কোনো রকমে নৌকায় ও খোলা আকাশের নিচে থাকছে। যাদের ঘর এখনো টিকে আছে, তারা তা খুলে খুলে নৌকায় তুলছে। বড় বড় ট্রলার ঘাটে বাঁধা।

এদিকে রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে এই মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে আমাদের এলাকার প্রায় ৬০০ টি বাড়ী ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছ।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহিমা বেগম (৮০) নামের এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তিনডা ঘর আছিন আমার, সব চোখের সামনে আতকা ডাইব্যা গেছেগা।’ মফিজুল মিয়া (৭০) নামের একজন বলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ২০-২২ শতাংশ জায়গা আর নয়টা গরুসহ গোয়ালঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

করিমপুর ইউনিয়নের এলাকাবাসীর দাবী যে, বাঁধ নির্মাণ করতে পারলেই শুঁটকিকান্দাকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার, সেই সব ব্যবস্থা করতে পারলে সাধারন জনগন কষ্ট থেকে অনেকটা রেহাই পাবে।

এদিকে রায়পুরার চরমধুয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনার ভাঙনে একটু একটু করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরমধুয়া ইউনিয়নের বীর চরমধুয়া, দড়িহাটি, শিকদার বাড়ি, নয়াহাটি ও গাজীপুরা এলাকার বাড়িঘর, ফসলি জমি, কবরস্থানসহ একটি বিশাল অংশ।

নরসিংদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুঠোফোনে বলেন, ‘শুঁটকিকান্দাতে তাৎক্ষণিকভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে শুটকিকান্দা সহ আশপাশের সকল এলাকায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।