নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে থানা বিএনপির সম্মেলনে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পক্ষের মারামারিতে অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০টায় সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় ‘গ্র্যান্ড তাজ পার্টি সেন্টারে’ থানা বিএনপির এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাড়ে ৯টায় এই ঘটনা ঘটলে সম্মেলন তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে পার্টি সেন্টারটির প্রধান ফটকসহ চেয়ার টেবিল ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজীর আহমেদ টিটুর।
এ ঘটনার পর সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হলে তিনি আর আসেননি।
কর্মীদের অভিযোগ, সকাল ১০টায় সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করে নেতাকর্মীদের জানানো হলেও এতে মারধরের শিকার হওয়ার ভয়ে উপস্থিত হননি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি উপস্থিত থাকলেও তাকে ঘটনার সময় কোনো পক্ষকেই নিবৃত্ত করতে দেখা যায়নি। বরং তিনি সম্মেলনস্থল থেকে পালিয়ে সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন বলেও অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির এখানকার নির্বাচনী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন ও তার অনুগত কোনো নেতাকর্মীদের সম্মেলনের ব্যাপারে জানানো হয়নি এবং তাদের কোনো কমিটিতে রাখা হয় না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল তাদের। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনের দিন ঠিক করা হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাদের ক্ষোভের সঙ্গে সহমত জানায় থানা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি অংশ। তারা আজ সকাল থেকেই সম্মেলনস্থলে বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ইকবালের নেতৃত্বে অবস্থান নেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা বিষয়গুলো অবহিত করবেন বলে জানান। পরে মামুন মাহমুদের পক্ষের একটি মিছিল সভাস্থলে স্লোগান নিয়ে প্রবেশ করার পরপরই তাদের ওপর চড়াও হয় গিয়াসউদ্দিনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও মারামারি হয়। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।
সংঘর্ষের ব্যাপারে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানান, সম্মেলনে থানা বিএনপির ১০টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আমরা সেটা ঘোষণা করতাম। কিন্তু সম্মেলন শুরুর আগেই অতর্কিতভাবে বহিরাগতরা এসে সম্মেলনস্থলে হামলা করে ভাঙচুর চালিয়েছে। এতে ১৪-১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের সবার নাম জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর আমি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করে আমাকে সম্মেলন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের আদেশেই সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেছি। পরে আহতদের নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছি। সেখানে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীদের নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ জানান, উনারা গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। পরিকল্পিতভাবে সম্মেলনকে পণ্ড করতে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য ও সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল জানান, এখানে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত দলীয় পদ পদবি থেকে। কোনো কর্মসূচি থাকলেও নেতাকর্মীদের জানানো হয় না। আজ থানা বিএনপির সম্মেলনের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের কাউকে জানানো হয়নি। থানার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়া করা লোক দিয়ে সম্মেলন করার চেষ্টা করা হয়। অথচ স্থানীয় নেতাকর্মীরা অবহেলিত থাকে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করতে গেলে তারা এ ঘটনা ঘটায়। থানা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, এটি থানা বিএনপির অভ্যন্তরীণ একটি দলীয় প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে গিয়াস উদ্দিন গ্রুপ ও মনিরুল ইসলাম রবির গ্রুপ চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেছে বলে ভিডিওতে দেখেছি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও সেখানে কাউকে পায়নি। পুলিশ পৌঁছার আগেই নেতাকর্মীরা সবাই চলে যায়।
ওসি বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ আহত হয়েছে বলেও কোনো খবর পাইনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন