নির্বাচনী আইনে পরিবর্তন আসছে

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে নির্বাচনী আইনে পরিবর্তন আনবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর্মকর্তাদের চিঠি দেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার থেকে এই চিঠি দেয়া শুরু হচ্ছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আমরা নির্বাচনী আইন সংস্কার করব। তা অবশ্যই সবার সঙ্গে আলোচনা করে। এমনকি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও মতামত নেয়া হবে।

জানা যায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ (আরপিও) কিছু সংশোধনী আনলে আরও স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব বলে ধারণা ইসির। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়াও অংশীজনদের পরামর্শ নেয়া হবে।

নির্বাচনী আইনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’ শব্দটি সংযোজিত হয়ে ফিরে আসতে পারে। এছাড়া একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে লটারি বাদ দিয়ে নতুন করে ভোটাভুটির বিধান করা হবে বলে জানা গেছে।

পরিবর্তিত নিয়মে বাদ হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তালিকা দেয়ার বিধানটিও। এছাড়া ডিজিটাল প্রচারণার নানা দিক যুক্ত করা, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে এবং মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে ভোটগ্রহণের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময়ে তা ধরা পড়লে প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান যুক্ত করা হবে।

সেইসঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে রিটার্নিং অফিসারকে ভোটকেন্দ্র বন্ধের ক্ষমতা দেয়া ও ব্যয় রিটার্নে সঠিক তথ্য দিয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের ওপর বেশি জোর দেবে কমিশন।

এর আগের কমিশন মতামত চাইলে কর্মকর্তারা এসব বিধান যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এবারও এই মতামত দেয়া হলে তাও যুক্ত করা হবে।

বিদ্যমান আরপিওতে হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে এবং মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময়ে কেউ আপত্তি না জানালে ভোটগ্রহণের আগে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নেই। ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম বা হামলার ঘটনা ঘটলে কেন্দ্র বন্ধের ক্ষমতা শুধু প্রিসাইডিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। এবার রিটার্নিং অফিসারকেও কেন্দ্র বন্ধের ক্ষমতা দেয়া, দাখিলকৃত রিটার্ন সঠিক কিনা তা যাচাই করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থায়ন, ইসির আয়োজনে একমঞ্চে সব প্রার্থীর প্রচারণার বিষয়গুলো আরপিওতে সংশোধনী আসছে। তবে সবই হবে আলোচনার ভিত্তিতে। ইসি কোনো বিষয় চাপিয়ে দেবে না।

ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে কমিশন সভায় উত্থাপন করা হবে। এরপর এ বিষয়ে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। এরপর আরপিও সংস্কারের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এর আগেও বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আরপিওতে বেশকিছু বিধান সংশোধন করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস হয়। এ পর্যন্ত ১১ বার আরপিওতে সংশোধনী আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন-২০১৩ বিল পাস হয়।

এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব (আইন) ড. শাহজাহান বলেন, নির্বাচনী সংস্কারের জন্য মতামত চেয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি যাওয়া শুরু হয়েছে। পরে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।