নির্ভুল আদমশুমারিতে স্যাটেলাইট ব্যবহারের চিন্তা

দেশে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি করে সরকার। প্রতিবারই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এই শুমারি করতো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। শুমারিতে প্রকৃত জনসংখ্যার চিত্র ফুটে ওঠে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এবার ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে বের হয়ে ডিভাইস নির্ভর ডিজিটালাইজড আদমশুমারি করতে চায় সংস্থাটি।

কোনো থানা বা বসতবাড়ি যেন বাদ না পড়ে সেজন্য স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহারেরও চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য ২০২১ সালের আদমশুমারি সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) আলাদা বরাদ্দও চাওয়া হবে। বিবিএস সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলছে, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে ৫টি আদমশুমারি হয়েছে। পরবর্তী শুমারি হবে ২০২১ সালে। কিন্তু এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া হচ্ছে। প্রতিবার গণনা ঠিক হয়েছে কিনা তা তৃতীয় পক্ষের দ্বারা যাচাই করা হয়। তারপরও বিতর্ক থেকে যায়। এই অবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে শুমারি করা হবে। যেন একেবারেই নির্ভুল হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিএসের সেনসাস ইউংয়ের পরিচালক জাহিদুল হক সরকার বলেন, ২০২১ সালের আদমশুমারিতে নতুনত্ব আনার চিন্তা করছি আমরা। এজন্য ই-সেনসাসের চিন্তা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইছি। এসব তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, নোটপ্যাড বা ইমেইলও হতে পারে। এজন্য তৈরি করা হচ্ছে ডিপিপি।

তিনি বলেন, কোনো বসতবাড়ি বা মানুষ যেন গণনা থেকে বাদ না পড়ে তার চিন্তাও করছি। স্যাটেলাইট ইমেজ বা ছবি ব্যবহারের চিন্তাও করা হচ্ছে। বিবিএস ডিপিপিতে এ খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইবে। বরাদ্দ পেলে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করা হবে।

বিবিএস জানায়, সামনের আদমশুমারি ডাটা সংগ্রহে আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হবে। এজন্য প্রচার-প্রচারণাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে এই আধুনিক পদ্ধতির জন্য কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে চায় বিবিএস।

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের ডেপুটি ডিরেক্টর আলমগীর হোসেন বলেন, বিবিএসের পক্ষ থেকে স্টেকহোল্ডার, নীতিনির্ধারক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। কীভাবে নির্ভুল সেনসাস করা যায়, তা নিয়ে দেশি-বিদেশি এক্সপার্টদেরও পরামর্শ নেয়া হবে। জেলা-বিভাগে ভিডিওকলের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রধানত দুই ধরনের স্যাটেলাইট রয়েছে- একটি হলো জিওস্টেশনারি, অন্যটি পোলার। যোগাযোগের কাজে যেসব স্যাটেলাইট ব্যবহার হয় তা প্রধানত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। এসব উপগ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পৃথিবীর আহ্নিক গতির সমান গতিতে শুধুই সামনের দিকে চলছে। তাই এদের পৃথিবী থেকে কার্যত স্থির মনে হয়। এই কারণেই এসব উপগ্রহ একস্থান থেকে অন্যস্থানে তথ্য পাঠাতে পারে। বাংলাদেশ শিগগিরই যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে, তা মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট।

আর পোলার উপগ্রহগুলো প্রধানত পৃথিবীর ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকে। এক মেরু থেকে আরেক মেরুর দিকে ধাবমান হওয়ায় পুরো পৃথিবীর ছবি তুলতে এসব উপগ্রহের খুব বেশি সময় লাগে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ধরনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে নাসা, ডিজিটাল গ্লোব, জিওআই, নোয়া।

বিবিএসে আদমশুমারিতে যে ধরনের ছবি বা ইমেজ ব্যবহার করতে চাইছে তার জন্য পোলার উপগ্রহের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল রনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি মূলত কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, টিভি-রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি, মোবাইল নেটওয়ার্ক ইত্যাদি বিষয় এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু ইমেজ তোলার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

তিনি বলেন, বিবিএসের সক্ষমতা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে স্যাটেলাইটের ম্যাপ বা ইমেজ ব্যবহার করে তারা এটা করতে পারবে। এজন্য ইমেজ তুলতে পারে এমন স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।