নেত্রকোনার দুর্গাপুরে জুলাই বিপ্লবে নিহত জাকিরের মা’কে দেয়া ঘরের শুভ উদ্বোধন

চব্বিশের অভ্যুত্থানে শহীদ জাকির হোসেনের ছিল একটিই স্বপ্ন গ্রামের বাড়িতে জমি কিনে একটি ঘর তুলবেন, যেখানে তিনি থাকবেন মাকে নিয়ে। জমি তিনি কিনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু নির্মম ভাগ্যের পরিহাস সেই জমিতেই আজ তিনি শুয়ে আছেন চিরনিদ্রায়। আর তার স্বপ্নের পাশেই আশ্রয় মিলেছে তার ’মা’ মিছিলি বেগমের। সরকারি সহায়তায় তৈরি হয়েছে একটি নিরাপদ পাকা ঘর, ছেলের কবরের পাশেই।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া গ্রামের সন্তান জাকির হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবাকে হারিয়ে শৈশবেই মায়ের হাত ধরে চলে যান রাজধানীতে। ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম ছিল তার জীবনের সঙ্গী।

সেখানে দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতেন, মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করতেন নিরবিচারে। নিজের কষ্টার্জিত উপার্জনে দুর্গাপুরে একটি জমি কেনেন, সেখানে ঘর তুলবেন বলে সেই ছিল তার স্বপ্ন। কিন্তু ২০২৪ সালের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম সড়কের কাঁচপুর এলাকায় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জাকির।

মৃত্যুর পর তারই কেনা সেই জমিতে তাকে দাফন করা হয়। ছেলে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন মিছিলে বেগম। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় আশ্রয় নেন আত্মীয়ের বাড়িতে। খবরটি পৌঁছায় নেত্রকোণার জেলা প্রশাসনের কাছে। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাকিরের কবরের পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি পাকা ঘর, তার মা মিছিলে বেগমের থাকার জন্য।

গতকাল শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে ঘরটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে মা মিছিলির কাছে হস্তান্তর করেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। এ সময় তিনি জানান, শহীদ জাকির হোসেনের আপনজন হিসেবে এখন শুধু তার বৃদ্ধ মা বেঁচে আছেন। তাঁর যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সরকার সর্বদা পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

তিনি বলেন, জাকিরের যে জমিটি তা বেদখলে ছিল, সেটি উদ্ধারের পর সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করে আজ তার মাকে উঠিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করবেন। তিনি এলাকাবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, এই বৃদ্ধ মায়ের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে আপনারা খেয়াল রাখবেন। তিনি আরও জানান, শহীদ জাকিরের কবরটিও শিগগিরই বাঁধাই করে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

জাকিরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি আশ্বাস দেন, এই মায়ের পাশে ভবিষ্যতেও প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

জাকিরের মা মিছিলি বেগম কণ্ঠ ভার করে বলেন, দুনিয়ায় আমার তো আর কিছুই নাই। আমার জাকির আর কোনো দিন ফিরবে না। তবু এখন তার কবরের পাশেই একটু মাথা গোঁজার জায়গা হয়েছে সন্তানের কাছেই আছি, এটুকুই আমার শান্তি। যতদিন বাঁচি এই কবরটার যতœ নিতে পারবাম, ছেলের পাশেই বাঁচি। স্থানীয় বাসিন্দারাও জেলা প্রশাসনের এই মানবিক উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা বলেন, এমন উদ্যোগ শুধু ঘর নয়, দিয়েছে এক শোকাহত বৃদ্ধ মায়ের শেষ বয়সে বেঁচে থাকার অবলম্বন।

ঘর উদ্বোধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীমা ইয়াসমিন, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্গাপুর থানার ওসি মো. মাহমুদুল হাসান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।