নেত্রকোনার মদনে জাল ওয়ারিশান সনদের ছড়াছড়ি, থানায় অভিযোগ

নেত্রকোনার মদনে জাল ওয়ারিশান সনদের ছড়াছড়ির অভিযোগ পাওয়া গেছে এক দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারিশান সনদ নিয়ে জমির নামজারি ও রেজিঃ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। এতে করে প্রকৃত জমির মালিক তাদের ওয়াশিনান অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে। এ ব্যাপারে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের কাইয়ুম খান চৌধুরী। তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়েও ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খানের স্বাক্ষর নিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে। ওই ওয়ারিশান সনদ দিয়ে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারী নামজারির আবেদন করেন। এর আগে হাসনপুর গ্রামের মাসুদ মিয়া তার চার বোনকে আড়াল করে প্রতারক চক্রের সহযোগিতায় জাল ওয়ারিশান তৈরী করে নামজারির আবেদন করেন। ফতেপুর ছত্রকোনা গ্রামের উসমান গনি একই স্বারক নম্বরে দুই ধরণের ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে। যেখানে তার ভাই মরহুম ইদ্রিস আলী খানের মেয়ে সন্তানদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে নামজারির আবেদন করেন। আর এই প্রতারক চক্রের সহযোগি হিসাবে কাজ করছেন দলিল লেখক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রহিছ মিয়া। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারিশান সনদের বিষয়টি সামনে আসলে দাখিলকৃত ৫ টি নামজারি আবেদন বাতিল করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ এ টি এম আরিফ। বিষয়টি জানতে পেরে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি মেম্বারদের সহযোগীতায় ওয়ারিশান সনদ গুলো ভুয়া বলে নিশ্চিত করেন। পরে এই ঘটনায় তিনি মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

জমি নামজারির আবেদনকারী ফতেপুর গ্রামের উসমান মিয়া জানান, ‘আমার ভাই ইদ্রিস আলী খান দীর্ঘদিন আগে মারা গেছে। মৃত ভাইয়ের জমি নামজারি করার জন্য দলিল লেখক রহিছ মিয়ার সাথে কথা বলি। নামজারির জন্য সকল প্রকার কাগজপত্র তিনি দিবেন বলে ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করি। তিনি কোথায় থেকে ওয়াশিনার সনদ সংগ্রহ করেছেন তা আমি জানি না।’

নামজারি আবেদনকারী হাসনপুর গ্রামের মাসুদ মিয়া জানান, ‘জমির নামজারি করার জন্য দলিল লেখক রহিছ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিই। সব কাজ তিনি করে দিবেন বলে ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করি। ৬ হাজার নগদ দিয়েছি। কাজ হলে বাকী টাকা দিতে হবে। ওয়ারিশানসহ সকল কাগজপত্র তৈরির ব্যাপারে তিনিই বলতে পারবেন।’

পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের কাইয়ুম খান চৌধুরী জানান, ‘২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম খান ও হাসনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন মোরশেদ মিয়ার এর মাধ্যমে জমির নামজারি আবেদন করি। খরচ বাবদ মোরশেদ মিয়াকে ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। কাগজপত্রের ব্যাপারে তারা বলতে পারবে।
পিয়ন মোরশেদ জানান,নামজারির জন্য কাইয়ুম খান আমার নিকট কাগজপত্র দিয়েছে, তিনি নগদ কোন টাকা দেয়নি।

দলিল লেখক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রহিছ মিয়া জানান, ‘আমার যেহেতু কম্পিউটারের দোকান আছে যে কেউ আবেদন করতে পারে। তবে ভূমি অফিসে নামজারির ফাইল নিয়ে আমি কোন যোগাযোগ করিনি।’

ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি জানান, ‘এ পর্যন্ত ৫টি জাল ওয়ারিশান সনদ সহকারী কমিশনার ভূমি এটি এম আরিফ স্যার আমাকে অবগত করলে তা জাল সনদ বলে সনাক্ত করি। একটি চক্র কিছু দিন ধরে আমার ও ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন কাগজ পত্র তৈরি করছে। এ বিষয়ে আমি ও এক ইউপি সদস্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

সহকারী কমিশনার ভূমি এটি এম আরিফ জানান, ‘এ পর্যন্ত ফতেপুর ইউনিয়নের ৫টি জাল সনদ পেয়ে নামজারি বাতিল করেছি। যারা আবেদন করেছে তাদেরকে অফিসে ডাকা হয়েছে। শুনানি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।