নেত্রকোনার মদনে শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ নয়- ছয়ের অভিযোগ

বিগত ১১ বছর ধরে বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক মোঃ আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রতিবছরেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের হলেও তদন্তের নামে অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এ বছরও বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু তদন্তে ধীরগতি।
উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়মন,দূর্নীতি ও অর্থ নিয়ে নয়-ছয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান গত ৫ মাস আগে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলা প্রশাসক অভিযোগটি আমলে নিয়ে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সুবাধে গত ৬ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। প্রতিবছরের মতো এবারও কি তদন্তের নামে অদৃশ্য কারণে ধামাচাপা পড়ে যাবে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম,দূর্নীতি? এমন প্রশ্ন জনমনে।
জানা গেছে, মো. আক্কাছ উদ্দিন ২০১১ সালে মদন শহীদ স্বরণীকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি উপজেলার বাললী-বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখনকার সময়েও বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়সহ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয়দের চাপে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
১১ বছরে মাত্র দুই বার নিজের পছন্দ লোকজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন আক্কাছ উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের তদন্তে আসেন। অনিয়ম প্রমাণিত হলেও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক। পরে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের বিষয় উল্লেখ করে ২০১৮ সালে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোতা মিয়াসহ অভিভাবক সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময়ে তদন্ত কমিটি অর্থ নয়-ছয় করার প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় অডিট ও মনিটরিং করার সুপারিশ জানান।
কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এমন দূর্নীতি নিয়ে এক শিক্ষার্থী অভিভাবক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে বিদ্যালয়ে তদন্ত আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরির্দশককে ঘুষ দেওয়ার হিসাব দেখিয়ে বিদ্যালয়ের দুই লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবনটি ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। সেই টাকা পূবালী ব্যাংক মদন শাখায় বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য রেজুলেশন করেন বিদ্যালয় কমিটি। ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে সেখান থেকে ১৩ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি। আবার জমা দেওয়া টাকা থেকে ভুয়া স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলণ করে আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক । এর সাথে বিদ্যালয়ের ক্রয়কৃত আসবাবপত্র নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান বলেন,‘প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন তার নিজ ক্ষমতা বলে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের অর্থ কেলেঙ্কারী বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় ও অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মদন শহীদ স্বরণীকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আক্কাছ উদ্দিন বলেন,‘ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য কমিটি হয়েছে। যারা তদন্ত করছে তারাই বলবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান মদন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল বারী বলেন, প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত চলমান রয়েছে, দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘আমি মদন উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে বিষয়টি এখন অবহিত হয়েছি। প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















