নড়াইলে ব্রিজ আছে, ব্রিজে উঠার রাস্তা নেই!

নড়াইল-খুলনা সড়কে সদরের গোবরা বাজারে নদীর ওপর সেতুটি ৯ মাস আগে নির্মিত হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়নি। নড়াইল থেকে খুলনায় যেতে সংক্ষিপ্ত রাস্তা গোবরা বাজার হয়ে ফুলতলা-খুলনা।

নড়াইল-খুলনা সড়কে সদরের গোবরা বাজারে নদীর ওপর সেতুটি ৯ মাস আগে নির্মিত হলে এর সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়নি। সেতুর দুই প্রান্তে ৫১ জন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় নড়াইল-ফুলতলা (খুলনা) সড়কের কাজ শুরু হচ্ছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ১২ মাসের কাজ ৩১ মাসেও শেষ না হওয়ায় খুলনা যাওয়ার এ রাস্তা চালু হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিস সংযোগ সড়কের জায়গা এখনো বুঝিয়ে না দেওয়ায় তাঁরা কাজ শুরু করতে পারছেন না।

জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি হলে নড়াইল থেকে সরাসরি বিভাগীয় শহর খুলনা যেতে ৩ ঘণ্টার সময় লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ বিভিন্নভাবে এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্যাকেজে ২০১৯ সালের মে নড়াইল-ফুলতলা সড়কের ২৭ কিলোমিটার ২ লেনবিশিষ্ট রাস্তা, চিত্রা নদীর মোহনায় ৫০ দশমিক ১২ মিটার লম্বা এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রশস্ত গোবরা ব্রিজ, সংযোগ সড়ক এবং ১৯টি কালভার্টের কাজ শুরু হয়। ১১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এর কার্যাদেশ পায় মো. মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্ম। এ কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময়কাল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শুরুই হয়নি।

নড়াইল-খুলনা সড়কে সদরের গোবরা বাজারে নদীর ওপর সেতুটি ৯ মাস আগে নির্মিত হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়নি নড়াইল-খুলনা সড়কে সদরের গোবরা বাজারে নদীর ওপর সেতুটি ৯ মাস আগে নির্মিত হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়নি।

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা জানিয়েছে, সংযোগ সড়কের জন্য সেতুর দুই প্রান্তে ১ দশমিক ২শ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৫ দশমিক ০৯ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫১টি বাড়ি, ১৫টি দোকান এবং অনেক গাছগাছালি অপসারণ করতে হবে। এ জন্য ৭৬টি পরিবার ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত পেয়েছে ২৫টি পরিবার।

সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের গোবরা বাজারের চা বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত মিনতি রানি জানান, তাঁদের পৌনে ৪ শতাংশ জায়গা ও একটি চায়ের দোকাদের ক্ষতিপূরণের জন্য দুই বছরে কমপক্ষে ২০ বার সংশ্লিষ্ট অফিসে গেলেও ক্ষতিপূরণ পাননি।

গোবরা বাজারের মো. শরিফুল বলেন, দুই বছর আগে নোটিশ পেয়েছি আমাদের প্রায় ১৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তারপর আর কোনো নোটিশ পাইনি এবং শুনানি হয়নি।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ পর্যন্ত ৮০-৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের জায়গা বুঝে না পাওয়ায় ১ দশমিক ২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হচ্ছে না। বিষয়টি অফিসকে বারবার জানানো হয়েছে। এখন বড়ো কাজের মধ্যে সেতুর অ্যাপ্রোচ কাজই বাকি রয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। খুব শিগগির জায়গা বুঝে না পেলে আগামী জুনের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ আসতে দেরি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ ছিল। ৪-৫ দিন আগে এ অর্থ এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই সংশ্লিষ্ট অফিসকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে তা নিষ্পত্তি হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জমান বলেন, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের বাকি অর্থ গত ১৫ দিন পূর্বে জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সঙ্গে শুনানি শেষ হলে আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তখন আমরা সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করতে পারব।’