ক্যাশলেস যুগে এনালগ পদ্ধতি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ট্যাক্সের নামে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায়

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নে হতদরিদ্র দুঃস্থ নারীদের ভালনারেবল ইউমেন বেনেফিট(ভিডব্লিউবি) কার্ড প্রদানে ট্যাক্সের নামে ৫’শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সার্কুলেশনের মাধ্যমে অনলাইনে ওই ইউনিয়নে ১২হাজার ৬০জন আবেদন করেন। এর মধ্যে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় ৪শ’ ৬৪ জনকে ভিডব্লিউবি কার্ড বরাদ্দ দেয়। চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর উপজেলার সকল ইউনিয়নের মতো ওই ইউনিয়নেও চুড়ান্ত তালিকা বিতরণ করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে সঞ্চয় হিসাব খোলা নিয়ে অধিদপ্তর কর্তৃক নোটিশ প্রদান করা হলে রমজান মাসের মধ্যেই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ভিতর বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, তেঁতুলিয়া সদর, শালবাহান, বুড়াবুড়ি ও ভজনপুর ইউনিয়নে চাল বিতরণ হলেও এখন পর্যন্ত দেবনগড় ইউনিয়নে চাল বিতরণ করা হয়নি।

এদিকে দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগীদের মাঝে ৫শ’ টাকা আদায় পূর্বক ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।

গত বুধবার (২৬ এপ্রিল) ওই ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মার্চ মাস থেকে এই ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। ইউএনও মহোদয়কে অবগত করার আগ পর্যন্ত টাকা আদায় অব্যাহত ছিল।

ওই ইউনিয়নের হাটুপাড়া গ্রামের এক উপকারভোগী জানান, ‘ভিজিডি কার্ডের বই খান যেবালা দেয় ছেলা হামারডে পাঁচশো টাকা করে নিছে। কোনো রশিদ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে বলেন, রশিদ মোক দেয়নি ওইখান মেম্বারটার লোগত আছে, দিবা চাহিছে।’ একই কথা জানান, দেবুপাড়া গ্রামের এক উপকারভোগী। তাদের কি ধরণের বসত বাড়ি রয়েছে জিজ্ঞাসায় দেবুপাড়া গ্রামের উপকারভোগী বলেন, চারচালা টিনের দুইটি রুম আছে। একটিতে তার শ্বাশুড়ী থাকেন অন্যটিতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী বসবাস করেন।

এছাড়াও মাঝগ্রাম, খেকিডাঙ্গী ও সতরনগছ এলাকাসহ প্রায় গ্রামের উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা আদায়ের হাতে লিখিত রশিদ পাওয়া গেছে। যা চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাশলেস সেবার উদ্বোধনের মাধ্যেমে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নে সেবাটির কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নসহ পঞ্চগড়ের ৪৩টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় যুক্ত হয়েছে ক্যাশলেস সেবা।
উপকারভোগীরা বলেন, ‘আমরা মুর্খ মানুষ আমাদের কাছ থেকে টাকা চাইছে, টাকা না দিলে কার্ড যদি না দেয় এ ভয়ে অনেকেই কোনো কথা না বলে পরিষদে টাকা জমা দিয়ে ভিডব্লিউবি কার্ডটি বাড়িতে নিয়ে যান।’

আরোও জানতে পারা যায়, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকিং একাউন্ট খুলে সাড়ে ৪শ’টাকা আদায় করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

ক্যাশলেসের সূত্র মতে অনলাইনে হোল্ডিং ফি জমার বিষয়ে উদ্যোক্তা সোহেল রানাকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫টি ওয়ার্ডের হোল্ডি এন্ট্রি করা হয়েছে। টাকা আদায়ের বিষয়ে আমি বলতে পারিনা এই বিষয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারগণ ভালো বলতে পারবেন।’

ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি সচিব আশুতোষ সরকার বলেন, ‘ট্যাক্সের বিষয়টি এখনো বলতে পারিনা, এখনো একাউন্টের কাজ শুরু হয়নি।’

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ছলেমান আলী বলেন, ‘ইউনিয়ন ট্যাক্স কেউ দেয় কেউ দেয়না, এটা নিয়ে আমি মাথা ঘামায় না। কেউ দিলে দিবে না দিলে নাই। ১শ’ জনের মতো দিয়েছেন।’ এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউপি সদস্য কর্তৃক জানা যায়, এখন পর্যন্ত দুটি রশিদ বহি শেষ করা হয়েছে। একটিতে ১শ’ করে মোট ২শ’এর মতো রশিদ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেল নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ মাসুদুল হক বলেন, ‘চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে যেন টাকা আদায় না করা হয়।’