পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আদালতের আদেশ অমান্য করে বিরোধপূর্ণ জমিতে ক্যানেল তৈরি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ অমান্য করে দখলের উদ্দেশ্যে ভেকু গাড়ী নামিয়ে বিরোধপূর্ণ গম খেতের আবাদি জমিতে মাটি কেটে ক্যানেল তৈরি করা হয়েছে। গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালের দিকে উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের হরবাবি নামক এলাকায় এই ক্যানেল তৈরির ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, উপজেলার ২৯ নং জে.এল এর ভজনপুর দেবনগড় মৌজার এস.এ ৪৪৩ নং খতিয়ানে মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেনসহ ১২জন বাদী হয়ে গত ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ১৯ তারিখ ১৩ জনকে বিবাদী করে ১৯দাগের ৮.৭৫ একর জমির উপর বিজ্ঞ তেঁতুলিয়া সহকারী জজ আদালত প গড়ে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নালিশী মামলা দায়ের করেন।
যার চলমান মোকদ্দমা নং- ৮৪/২০২২ (অন্য)। এরপর বিবাদীগণ চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নালিশী মামলাকে তোয়াক্কা না করে বিরোধপূর্ণ ২৯৮১ নং দাগের উপর আসলে বেলাল হোসেন গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ ১৯দাগের উপর ৫জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়ে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪/১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- এম.আর ৫৫৬। মামলাটি দাখিল হওয়ার পর আদালতের আদেশক্রমে মামলায় তফসিল বর্ণিত জমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও উভয় পক্ষকে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ। এতে নোটিশকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার এএসআই পলাশ চন্দ্র রায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, বেলাল হোসেন কর্তৃক বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়ে দায়েরকৃত মামলার তফসিল বর্ণিত জমিতে গত ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার নোটিশ প্রদানের সময় পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের সামনে ২য় পক্ষরা আবাদী গম খেতের জমিতে ভেকু গাড়ী নামিয়ে বিরোধপূর্ণ ২৯৮১ নং দাগের পূর্বে ক্যানের খননের কাজ শুরু করেন। এরপর দক্ষিণে পাকা রাস্তার সাইটে বিকাল পর্যন্ত ক্যানেল খননের কাজ করতে থাকেন।
বেলাল উপায় অন্ত খুঁজে না পেয়ে ১৪৪/১৪৫ ধারার আদেশ ভঙ্গের দায়ে দন্ড বিধি আইনের ১৮৮ ধারায় গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ ৮জনকে প্রতিপক্ষ করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়ে আবেদন জানিয়েছেন। এতে প্রতিপক্ষরা হলেন, উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সিদ্দিকনগর গ্রামের মৃত নজম উদ্দিন আমিনের ছেলে মোজাফফর হোসেন ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম, দেবনগড় ইউনিয়নের হাওয়াজোত শতরমগছ গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে হকিকুল ও হাফিজার রহমান, মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে জুলফিকার, মৃত ইয়ার উদ্দীনের ছেলে এনামুল ও লতিফগছ হরবাবি গ্রামের মৃত সফিজ উদ্দিনের ছেলে তসির উদ্দিন।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, বেলালের জন্মের আগ থেকেই তাঁর বাবা এসব জমি ভোগদখলে ছিলেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর সে (বেলাল) আবাদে ভোগদখল করে আসছেন।
মামলার ১মপক্ষ (বাদী) মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, ভজনপুর দেবনগড় মৌজার এস.এ ৪৪৩ নং খতিয়ানের অন্যতম রেকর্ডীয় মালিক বিবি করিমন নেছা আট আনা হিস্যায় তাঁর বাবার নিকট গত ১৯৭৫ সালের মে মাসের ২ তারিখ ৮১০২ নং কবলা দলিলের তফসিলে ১৫ দাগে ৫একর ৭৮শতক জমি বিক্রয় করে দখল হস্তান্তর করেন। এরপর ওই খতিয়ানে প গড় মুন্সেফ আদালতে ৪৩/৬৯ নং মামলায় গত ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখের আদাশের ভিত্তিতে গত ১৯৭০সালের জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখের সার্টিফাইট কপির মাধ্যমে ৩একর ৮৯শতক জমি পায়।
জমির আদেশ পাওয়ার পর তাঁর বাবার নামে গত ২০০৪ সালে মার্চ মাসের ৩০ তারিখ ৮৫৮নং খারিজ খতিয়ান খুলেন। তারপর এস.এ ৪৪৩ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক ইজার উদ্দিন, মাহবুব, সামছুল আলম এবং হমিরন বেওয়ার নিকট হতে তাঁর বাবা সাড়ে তিন একর জমি ক্রয় করেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করা অবস্থায় ভাই, বোন ও মায়ের নামে বর্তমান বিএস জরিপের সময় উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস স্বস্ত¡তার ভিত্তিতে ১২৪৭ নং ডিপি খতিয়ান প্রস্তুত করে দেন। বেলাল আরোও বলেন, ৪৭/৪৮ বছর ধরে ভোগদখলীয় জমি বিবাদী ফরিদা বেগম জবর দখল করার পাঁয়তারা করছেন। ফরিদা কোর্টের আদেশকেও মানছেন না। তাঁর গম খেতের জমিতে ভেকু নামিয়ে জবর দখল করার উদ্দেশ্যে ক্যানেল খুড়ছেন। থানা পুলিশের কাছে দৌড়ঝাঁপ করে কোনই সহযোগিতা পাচ্ছেন না তিনি। তিনি আদালতের নিকট এর সুষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়েছেন।
মামলার ২য়পক্ষ(বিবাদী) ফরিদা বেগম ও তাঁর স্বামী মোজাফফর হোসেন বলেন, তাঁরা পৈতৃক ও দানপত্র দলিল মূলে মালিক। বেলালের সঙ্গে তাদের ২০২২ সাল থেকে সালিশী বৈঠক হয়ে আসছে। গত ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ তেঁতুলিয়া মডেল থানায় সার্ভিস হেল্প সেন্টারে এক বৈঠকের মাধ্যমে বেলাল তাদেরকে ৫৬শতক জমি ওই মাসের ২৯ তারিখ বুঝে দেয়ার কথা বলে দেয়নি।
এরপর তাঁরা একজন স্থানীয় সার্ভেয়ার এনে ৫৬শতক জমি জরিপ করে খুঁটি ও তারকাটা বেড়া দেয়। এদিকে বেলাল তাদের খুঁটি ও তারকাটা বেড়া তুলে নিয়ে যায়। তারা বলেন, ৫৬শতক জমির কথা হলেও পাবেন ৩একর ৭শতক জমি। বেলাল বসার কথা বলে সময় পার করায় উপায় না পেয়ে এভাবে তাঁরা ভেকু নামিয়ে দখলের চেষ্টা করছেন। মামলার কথা জিজ্ঞাসায় তাঁরা বলেন, তাদেরও ১৪৪/১৪৫ মামলা করা হয়েছে। তাদের মামলা নং- ৫৫৭।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মমিনের কাছ থেকে জানতে চাইলে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানেন না। তবে তিনি বলেন, এই জমি তাঁর দেখা মতে বেলাল আবাদ করছেন। বেলালের জন্মের আগ থেকে তাঁর বাবাও মৌসুমে আবাদ করে আসছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ছলেমান আলী বলেন, ফরিদা ও বেলালের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি অবগত আছেন। বেলালের বিরুদ্ধে ফরিদা ইউনিয়ন পরিষদে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদা জমি পাবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় জানান, আদেশ অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে বেলাল লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন