পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ!

পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় অসহায় এক পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে অবরুদ্ধ করার উভিযোগ উঠেছে। গত মাসের ১৫ তারিখ সোমবার দুপুরে উপজেলার ৭নং দেবনগড় ইউপি’র আঠারখাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে লাফিজুল ইসলামের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাকে কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে।

লাভিজুল ইসলাম বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে নুর ইসলাম ও তার স্ত্রী সাহেরা বেগমকে প্রতিবাদী করে গত ১৫ মার্চ ২০২১ তারিখে উপজেলার দেবনগড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মহসিনউল হকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, প্রতিবাদীরা ১৫ মার্চ দুপুরে বাড়ি প্রবেশের মূল রাস্তা বন্ধ করেন। ইউপি সদস্যকে অবগত করা হলে ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদীদেরকে রাস্তা প্রবেশের সম্মুখভাগ বন্ধ না করার কথা বলেন। অতঃপর প্রতিবাদীরা তা তোয়াক্কা না করে সন্ধ্যা ৭টায় রাতের অন্ধকারে রাস্তা বন্ধ করে দোকান ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
বাদী লাফিজুল কোন কিছু বলতে গেলে তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করেন।
অভিযোগকারী লাফিজুল ইসলাম জানান, উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান উভয় পক্ষকে আপোষ-নিষ্পত্তির চেষ্টা করলে প্রতিবাদীগণ তা মান্য না করে দ্বিতীয় দফায় গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখ পুনরায় রাস্তাকে কেন্দ্র করে তাদের ওপর মারপিটসহ রক্তাক্ত জখম করেন।

উপায় অন্ত না পেয়ে লাফিজুল ইসলাম পুলিশী আশ্রয়ের জন্য দ্বিতীয় বারের মত বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে নুর ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মীর মোশারফ হোসেন, বয়জুল, নুর ইসলামের স্ত্রী সাহেরা বেগম, বয়জুল ইসলামের স্ত্রী দিলো, ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী রিতা বেগম ও নুর ইসলামের ছেলে সাঈদীকে আসামী করে একটি এজাহার পেশ করেন। এজাহার পাওয়ার পর তেঁতুলিয়া মডেল থানা আপোষ মীমাংসা করার জন্য সালিশী বৈঠক বসান।

এজাহার সূত্রে জানাযায়, আসামীগণ লাফিজুলের বাড়ী থেকে বের হওয়ার রাস্তা কোদাল দ্বারা কোপাইয়া চলাচলের অনুপযোগী করতে থাকিলে তার স্ত্রী আজিমা বেগম ও তার কন্যা লাভলী আক্তার বাধা দেয়ায় তাদের এলোপাথারী মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। পরে তার স্ত্রী তাকে মুঠোফোনে জানালে তিনি তার অটোভ্যানটি নিয়ে ঘটনাস্থলে আসামাত্রই আসামীগণ তার অটোভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকেও বেধরক মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। এ ঘটনায় লাফিজুলের কন্যা লাভলী আক্তার বর্তমানে স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তির উপক্রয় রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে করা হয়। যা লাভলী আক্তারের জরুরী নম্বর- ১০২/৩১০, রেজিঃ নং- ৮/৪৫৭, তারিখ ২৪ মার্চ ২০২১ যা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য রংপুর অথবা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আজিমা বেগমের জরুরী নম্বর- ১০৩/৩১১, রেজিঃ নং- ৭/৪৫৬ এবং লাফিজুল ইসলামের জরুরী নম্বর- ১০৪/৩১২, রেজিঃ নং- ১১/৪৬০ তারিখ ২৪ মার্চ ২০২১।

লাফিজুল ইসলাম জানান, উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে থানায় এজাহারের নিবেদন করলে তার এই এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে আপোষ মীমাংসার সালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিপক্ষে হওয়ায় তা না মানার জন্য আসামীরা তাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে গত ১৪ এপ্রিল একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ আসামীরা তার অটোভ্যানে থাকা ঝাড়বাড়ী মৌজার জে.এল.নং- ৩১ এর এস.এ ১৩৯ নং খতিয়ানের ১৪৫৯ নং দাগের দক্ষিণাংশের রেকর্ডীয় মালিকের ওয়ারিশ মৃত মইমদ্দিনের কন্যা সহিমা, আলেয়া ও সালেহা এবং তার স্ত্রী দবিরন নেছা কর্তৃক ২.৫০ শতক জমি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রির জন্য প্রস্তুতকৃত দলিলসহ আরোও যাবতীয় কাগজপত্রসহ অটোভ্যানটি ১৮দিন যাবৎ আটকে রাখেন। পরে অটোভ্যানটি ফেরত পাইলে কাগজপত্র পাননি তিনি।

এ বিষয়ে নুর ইসলামের স্ত্রী সাহেরা বেগম জানান, লাফিজুলের সামনের দাগটি তাদের ক্রয়কৃত জায়গা। ১৯৯৬ সালে তারা এই দাগে সাড়ে ১১শতক জমি ক্রয় করছেন। লাফিজুল এতদিন তাদের এই জমি দিয়ে চলাফেরা করেছেন আজ তাদের প্রয়োজনে রাস্তার সামনে একটি দোকান নির্মাণ করেন। তাদের এই নির্মিত দোকান ভেঙে ফেলেন লাফিজুল জানিয়েছেন সাহেরা বেগম।

এব্যাপারে ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম জানান, লাফিজুলের রাস্তা বন্ধের বিষয়টি সঠিক। তিনি একজন গরিব তাকে যতটুকু সহযোগিতা করার দরকার আমরা সহযোগিতা করব।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার এস.আই ইয়াকুব আলীর নিকট থানায় লাফিজুলের এজাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি দু’বার আপোষ মীমাংসা করার জন্য সালিশী বৈঠক করেন। সালিশী বৈঠকে লাফিজুলকে অন্য বিকল্প রাস্তা দেয়ার কথার সিদ্ধান্ত হইলে লাফিজুল তাদের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ তাই বিষয়টি ওই অবস্থায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, তিনি অভিযোগের দরখাস্ত পেয়েছেন এবং এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। বিষয়টি দেখবেন জানিয়েছে।