পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুই ছেলে ও বউমার হাতে মারধরের শিকারে বৃদ্ধা মায়ের সংবাদ সম্মেলন

পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় দুই ছেলে ও বউমার হাতে অমানবিক মারধরের শিকার হয়েছেন সত্তোর্ধ্ব বয়সী হালিমা খাতুন নামের এক বৃদ্ধ মহিলা। সন্তানের হাতে মারধরের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে দুই ছেলে ও ছেলের বউ। এরই প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই অসহায় মা।  

শনিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২১) বিকেলে তেঁতুলিয়া জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি। নির্যাতিত ওই মহিলার বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামে মৃত গরজু মোহাম্মেদের স্ত্রী।

জানা যায়, গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুই দফায় ওই বৃদ্ধ মহিলা ও তার বড় বউমা ফাহমিদা আকতারের উপর এই নির্যাতন করা হয়েছে। এই নির্যাতিত শিকারের বৃদ্ধ মহিলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের রেজিঃ নং- ৩৪/৯৮১, বেড নং- ০১ এবং ফাহমিদা আকতারের রেজিঃনং- ৩১/১১৭৮, বেড নং- ০৬।   

নির্যাতিত বৃদ্ধা হালিমা খাতুন জানান, আমার মেজো ছেলে আব্দুল হামিদ (৩৮) ও ছোট ছেলে হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৩৫) ও হামিদের স্ত্রী জান্নাত (৩০) দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে আমার উপর মানসিক ও শারিরীকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। যা আমাকে ভীষণ অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে স্বামীর তরকাসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মধ্যে আংশিক সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রয় করলে তারা কিভাবে জমি বিক্রির টাকা আত্মসাত করা যায়, ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়ে উঠে।

গত ৬ ডিসেম্বর সকালে আমার বসতবাড়ির টিনশেড পাকা ঘরের সিঁড়ি মিস্ত্রি দ্বারা কাজ করার সময় তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লাঠি, কোদাল ও ছোরা নিয়ে আক্রমণ করতে থাকে। কোদাল দিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে দেয়। পরে বাধা দিতে গেলে বড় বউমা ফাহমিদা আক্তারের মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে আমি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসার সাথে সাথেই আমার দুই ছেলে ও হামিদের স্ত্রী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। গালিগালাজের কারণ জানতে চাইলে তারা ধারালো ছোরা দিয়ে আমাকে মাথায় আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।  এরপরেও মেজো ছেলের বউ জান্নাত আমার উপর নির্যাতন চালায়। এ সুযোগে আমার ঘরে ঢুকে ট্রাংকের তালা ভেঙ্গে জমি বিক্রির ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আমার কানের দুল এবং বড় বউমা ফাহমিদা আক্তারের পড়নের  স্বর্ণের গলার হার নিয়ে যায়। আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরকেও হুমকি প্রদর্শন করে আমার পাষান্ড দুই ছেলে। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। ছেলে হয়ে মায়ের চরিত্রহীন বলে বারবার উত্যক্ত করছে। গলায় রশি বেঁধে মরতে পর্যন্ত বলছে। তাই বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করতে হয়েছে। থানায় অভিযোগ করলেও এখনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমি থানায় কিংবা আদালতে যেতে পরছিনা। মামলার কথা শুনলেই তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।

তিনি আরও জানান, ২৯ বছর আগে আমার স্বামী তিন পুত্র ও ১ মেয়ে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অতি কষ্টে দিনাতিপাত করে সন্তানদের লালন পালন করেছি। তারা বড় হয়ে এখন আর আমার খেঁাজ খবর নেয় না। কি খাই, না খাই কোন খবর না নিয়ে বরং দীর্ঘদিন ধরেই দুই ছেলের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। পরিবার বর্গ ও এলাকাবাসীর আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে তার বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম ও বড় বউমা মাহমুদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।